ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেনের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে অসুস্থ হয়ে ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় তানজিন আহমেদ আবিদ (৩০) নামে ছাত্রদল কর্মী মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির পাঁচ নেতাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিষ্কারের ঘোষণা আসে।
রোববার রাত ৯টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের অভ্যন্তরে হাঙ্গামা, সহিংসতা, রক্তপাতসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরন, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন, গৌরীপুর পৌর বিএনপি সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেন প্রথমবার মোটরসাইকেল ও গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে গৌরীপুরে প্রবেশ করেন। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরনের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। এম. ইকবাল হোসেনের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে উপজেলায় প্রবেশ করতে চাইলে হিরনের লোকজন বাধা দেয়। এর পরপরই উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলার সময় ছাত্রদল কর্মী তানজিন আহমেদ আবিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তানজিন আহমেদ আবিদ ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেলের অনুসারী ছিলেন। তাঁর বাবা মরহুম দেওয়ান মো. আবুল হোসেন ছিলেন দক্ষিণ জেলা উলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন তালুকদার আকাশ জানান, গৌরীপুর সরকারি কলেজের হোস্টেল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশের এক পর্যায়ে হঠাৎ দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তখন হিরনের লোকজনের ধাওয়া খেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আবিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হিরনের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। তাকে অনেক চেষ্টা করেও কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। পরে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করেও জ্ঞান না ফেরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাঈনউদ্দিন খান সমকালকে বলেন, আমরা তাকে মৃত হিসেবে হাসপাতালে রিসিভ করেছি। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।'
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে কোনো আঘাতজনিত কারণে আবিদ মারা যাননি। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’