আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতারা মনে করছেন, জোটে গেলে স্বল্পমেয়াদে কিছু আসনে জয়লাভের 'লাভ' হলেও, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য 'ক্ষতির' মুখে পড়বে।
নির্বাচন নিয়ে কোন দিকে যাবে এনসিপি—তা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা মোটরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছে দলটির জাতীয় কমিটি। ছয় ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং প্রধান সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী উপস্থিত থাকলেও দুই গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম অনুপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার একটি বড় অংশজুড়েই ছিল বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা।
বৈঠক শেষে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে, তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
বৈঠক সূত্র জানায়, নাহিদ ইসলাম ও নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী কোনো জোটে না গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বেশিরভাগ সদস্যই এই প্রস্তাব সমর্থন করেন।
একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপি বা জামায়াতের জোটে গেলে প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু জুলাই সনদ ও সংস্কার নিয়ে বিএনপির বর্তমান অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিলে সেই সব বিতর্কের দায়ভার এনসিপিকেও নিতে হবে। এ ছাড়া এনসিপির প্রার্থীদের জন্য বিএনপির কর্মীরা মাঠে নামবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান দলটির নেতারা।
অন্যদিকে জামায়াত প্রসঙ্গে একজন এনসিপি নেতা বলেন, দলটি ইতিবাচক প্রস্তাব দিলেও তাদের প্রভাবে এনসিপি 'ঢাকা পড়ে যেতে পারে'। ওই নেতার মতে, জামায়াতের একটি ভারী ঐতিহাসিক বোঝাও রয়েছে। আরেকটি সূত্র জানায়, একজন সিনিয়র নেতা সতর্ক করে বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে ধর্মীয় চরমপন্থার পুনরুত্থান ঘটতে পারে।
যদিও বেশিরভাগ নেতাই বিনা জোটে নির্বাচনের পক্ষে, বৈঠকে এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের মতো সমমনা দলগুলোকে নিয়ে তৃতীয় একটি ফ্রন্ট গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়। তবে সূত্র বলছে, গণ অধিকার পরিষদ বা গণসংহতি আন্দোলনের মতো দলগুলো নতুন জোটে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়, কারণ তাদের অনেকেই এরই মধ্যে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্ত।