Image description
 

জুলাই আন্দোলনের আলোচিত শহীদ মীর মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তার যোগদানের পর থেকেই ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘুরছে বৃহত্তর উত্তরায়।

 

গত ৩ নভেম্বর সারা দেশের ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। তবে ঢাকা-১৮ আসনসহ মোট ৬৩ আসন ফাঁকা রাখা হয়। শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছিল এসব আসনে জোটভুক্ত শরিক দলের নেতাদের মনোনয়ন দিবে বিএনপি। ব্যতিক্রম ছিল না ১৮ আসনও। তবে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপির সদস্য ফরম পূরণ করায় ঢাকা-১৮ আসনে পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে সে হিসাব। এরই মধ্যে মীর স্নিগ্ধকে অতিথি করে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দকে উঠান বৈঠকের উদ্যোগ নিতেও দেখা গেছে। এতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মীর স্নিগ্ধই হতে পারেন ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী- এমন গুঞ্জন বইতে শুরু করেছে আসনের বিভিন্ন এলাকায়।

আলোচনার সূত্রপাত

জুলাই আন্দোলনের সময় উত্তরা এলাকায় শহীদ হন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এরপর থেকেই তাদের পরিবার উত্তরার রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠে। গত ৫ আগস্ট মীর স্নিগ্ধ ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও আরও বৃদ্ধি পায়।

বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার দিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মীর স্নিগ্ধের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ তার পক্ষে প্রচারণাও চালাতে শুরু করেছেন।

তবে তার হঠাৎ বিএনপিতে যোগদানে কিছু স্থানীয় নেতা ও বাসিন্দা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উত্তরার স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, বিএনপিতে যোগ দিয়ে মীর স্নিগ্ধ ক্ষমতার রাজনীতির পেছনে ছুটছেন। জুলাই শহীদের ভাই হওয়ায় ভোটের রাজনীতিতে তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুরাগের দলিপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানায়, জুলাই শহিদের ভাই হিসেবেই মীর স্নিগ্ধকে আমরা চিনি। ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির জেলখাটা ত্যাগী নেতাদের জনপ্রিয়তাই বেশি। এই আসন থেকে বিএনপি স্নিগ্ধকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যয়ন করা হবে।

এদিকে, বিএনপি নেতৃবৃন্দ মীর স্নিগ্ধকে সদস্য হিসেবে যুক্ত করায় ঢাকা-১৮ আসনে তিনিই হতে পারেন ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী- এই ধারণাই এখন অধিকাংশ বাসিন্দাদের। আর এমনটি হলে ঢাকা-১৮ আসনে ব্যাপক সামাজিক অগ্রগতির আশাও প্রকাশ করছেন তারা। এ নিয়ে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ ইকবাল যুগান্তরকে জানান, রাজনীতিতে তরুণদের অগ্রাধিকার পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। এই আসনে মীর স্নিগ্ধ মনোনয়ন পেলে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ও বিভক্তি দুটোই কমে আসবে। স্নিগ্ধ যেহেতু সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয়, এতে ঢাকা-১৮ আসনের সামাজিক উন্নয়নে অগ্রগতি আসবে।

উত্তরখান এলাকার বাসিন্দা ও জুলাই আন্দোলনকর্মী আবদুর রহমান নাবিল বলেন, এই বয়সে এতটুকু সাহসও অনেকে দেখাতে পারে না। আমি আগেও বলেছিলাম যে এনসিপি বা বিএনপির উচিত ঢাকা -১৮ থেকে তাকে নমিনেশন দেওয়া। তরুণরা নেতৃত্বে এলে পরিবর্তন আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের বেড়ে ওঠা বিএনপি পরিবারেই। তার বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান (বাবুল) ছাত্রজীবনে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ এই দুই মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। ছেলে মীর স্নিগ্ধের বিএনপিতে যোগদানের সময় ভার্চুয়ালি তারেক রহমানের উপস্থিতিতে তিনিও বৈঠকটিতে হাজির ছিলেন। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিএনপি থেকে কোন সিগন্যাল পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আমি এখন একটি দলের কর্মী। দল থেকে আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমি সেভাবেই কাজ করব। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দক্ষিণখানের গাওয়াইরে এক সড়ক উন্নয়ন কাজের অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়ন নিয়ে ইঙ্গিত দেন মীর স্নিগ্ধ। বক্তব্যে তিনি বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে আমাদের যে এলাকাগুলো রয়েছে এই এলাকাগুলোকে সর্বোচ্চ নিরাপদ এবং বাংলাদেশের একটি মডেল এলাকা হিসেবে আমরা তৈরি করব। পুরো বাংলাদেশ ঢাকা-১৮ আসনকে দেখে সবাই যেন গর্বিত হয়। আসন নিয়ে এমন স্পষ্ট বক্তব্যে স্নিগ্ধের নির্বাচনী পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।