আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর একাংশ) আসনে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। এতে হতাশ হয়েছেন এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দুর্গ বা ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের পর বিগত ২০২৩ সালের উপনির্বাচন ছাড়া দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহাসে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। শুধু তাই নয়, সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখন ২০১৮ সালের জোটের গ্যাঁড়াকলে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দেয়নি।
সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছাড়া অন্য কাউকে এখানে মনোনয়ন দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তার অনুসারীরা। এছাড়া সরাইলের বাসিন্দারা মনোনয়ন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠে আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় গণসংযোগসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আসছেন। আসনটিতে প্রায় প্রতিবারই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
তবে ২০০৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি এ আসন থেকে জোটের প্রার্থী দিয়েছিলেন ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মুফতি আমিনীকে। তিনি পরে জোটের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সেজন্য ওই এলাকাটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৫ বছরেও সরাইল উপজেলার অনেক ইউনিয়ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
সরাইল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। এখানে জোটের শরিক কাউকে (মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী) মনোনয়ন দেওয়ার পর রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন। যেমনটি হয়েছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এখানে ৭০ শতাংশ দলীয় নেতাকর্মী রুমিন ফারহানার পক্ষে থাকবেন।
তারা বলছেন, রুমিন ফারহানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের জনগণের সঙ্গে ছিলেন, এখনো আছেন। ২০১৭ সাল থেকে এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি। ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলের বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি এলাকায় সমাবেশ করেছেন। এজন্য তিনি অনেক হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানেন। এ ব্যাপারে তিনিই ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।
সম্প্রতি বিএনপি সারা দেশে তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর এ আসনে কারো নাম ঘোষণা না করায় রুমিন ফারহানার শত শত অনুসারী হতাশ হয়েছেন।
রুমিন ফারহানা অনুসারীদের ভাষ্য- এখানে তাকে (রুমিন ফারহানা) ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) থেকে রুমিন ফারহানার বাবা ভাষাসংগ্রামী অলি আহাদ নির্বাচন করেছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের তাহের উদ্দিন ঠাকুর। ‘বিতর্কিত’ ওই নির্বাচনে তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে ঢাকা থেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।