ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য ২৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এটিকে প্রাথমিক তালিকা উল্লেখ করে দলটি বলেছে, প্রয়োজনে যেকোনো আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে হাইকমান্ড। ঘোষিত তালিকাকে দূরদর্শী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ত্যাগী ও অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রার্থিতা ঘোষণায় নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, এবার প্রার্থী তালিকায় নবীন এবং প্রবীণের মিশেল থাকবে। ঘোষিত প্রাথমিক তালিকায় সেটাই দেখা গেছে। ২৩৬ প্রার্থীর মধ্যে এবার স্বয়ং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৮৫ জনই প্রথমবার লড়বেন নির্বাচনের মাঠে। নবীনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকজন হলেন- তানভীর আহমেদ রবিন (ঢাকা-৪), ইশরাক হোসেন (ঢাকা-৬), আমিনুল হক (ঢাকা-১৬) এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭)।
ঘোষিত ১০ নারী প্রার্থীর মধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি আসনে (দিনাজপুর-৩, ফেনী-৭, বগুড়া-১) প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণায় যোগ হয়েছে বাড়তি উচ্ছ্বাস। অন্য নারী প্রার্থীরা হলেন- তাহসিনা রুশদীর লুনা (সিলেট-২), সানজিদা ইসলাম তুলি (ঢাকা-১৪), শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), চৌধুরী নায়াব ইউসুফ (ফরিদপুর-৩), আফরোজা খানম রিতা (মানিকগঞ্জ-৩), ইশরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (ঝালকাঠি-২), সাবিরা সুলতানা (যশোর-২), সানসিলা জেবরিন (শেরপুর-১ ) এবং ফারজানা শারমিন পুতুল (নাটোর-১)।

মনোনয়নে ঠাঁই পেয়েছেন গুম হওয়া নেতাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা হলেন সানজিদা ইসলাম তুলি এবং তাহসিনা রুশদী লুনা।
সানজিদা ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ঢাকা-১৪ আসনে। তার ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন ছিলেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় র্যাবের একটি দল। এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আর নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট-২ আসনে।

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্যাগী ও অভিজ্ঞদেরও মূল্যায়ন করেছে বিএনপি। ঢাকার তেজগাঁওয়ের এক বিএনপি কর্মী বলেন, গ্রামে-গঞ্জে পাড়া-মহল্লায় সবার মাঝে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
আরেক কর্মী বলেন, অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন কিন্তু সবাইকে তো আর দিতে পারবে না। যে একজনকে দেবে তাকে নিয়েই কাজ করতে চাই।
আগে থেকেই নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা বিএনপি প্রার্থী তালিকাকে দূরদর্শী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তার সঙ্গে নবীন ও প্রবীনদের যুক্ত করে যেটা হয়েছে তাতে প্রাজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গীরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, অভিজ্ঞতা, তরুণ্য, আর্থিক সক্ষমতা এবং সংগঠনের প্রতি অনুগত- সবকিছু মিলিয়ে প্রার্থী দিয়েছে। আমি শুনলাম এবার প্রার্থী তালিকায় ব্যবসায়ী কম। যদি সেটা হয় তাহলে ভালো।
এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জয়ের জন্য বিএনপিকে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও নতুন ভোটারদের দিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, তরুণ ভোটাদের এবার একটা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনটা উপলব্ধি করে তাদের আকৃষ্ট করার মতো কর্মসূচি যুক্ত করতে হবে।
অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, নির্বাচন ঠিক ছিল কি না- সে বিষয়ে চূড়ান্ত ভালো বোঝা যাবে নির্বাচনের পরে। দলের বিভিন্ন লেভেলের পলিসি আগের থেকে তুলনামূলকভাবে লিবারেল করেছে, এটারও একটা ফলাফল তারা নির্বাচনে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
অঘোষিত ৬৩টিসহ খুব শিগগিরই দল ও জোট মিলে ৩শ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার কথা জানিয়েছে বিএনপি