আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে ঝুলে আছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। সতেরো বছর বাংলাদেশ থেকে বাইরে রয়েছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্ত¯œাত বিজয়ের পর স্বৈরাচার হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যান। এর পর গত এক বছরেরও বেশি সময় তার দেশে আসা নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সভা সেমিনারে বলছেন, ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ার পর ১৭ বছর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করা তারেক রহমান খুব শীঘ্রই দেশে ফিরবেন। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির এই শীর্ষ নেতা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওমরাহ পালন করবেন।
সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ওমরাহ করতে যাবেন। সঙ্গে পরিবারের আরও লোকজন যুক্ত হবেন। এর পর একসঙ্গে মা-ছেলে ওমরাহ করে ফের লন্ডনে যাবেন। লন্ডন থেকে খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমান মায়ের হাত ধরেই দেশে ফিরবেন এমন পরিকল্পনাই বিএনপির মধ্যে রয়েছে। ঠিক কবে তিনি দেশে ফিরবেন সেই দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এই নিয়ে বিএনপির অন্তত অর্ধডজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের। তারা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে আসার সকল প্রস্তুতিই শেষ করেছে বিএনপি। এখন নির্বাচনের আবহাওয়ার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। বিশেষ করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্তের সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে আসার দিনক্ষণ অপেক্ষা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখনি নির্বাচনের চূড়ান্ত তফসিলের দিন ঘোষণা করবেন তখনই তারেক রহমানের দেশে আসা চূড়ান্ত হবে। তফসিলের একদিন অথবা দুই দিন আগে তারেক রহমানের দেশে আসার সম্ভাব্য সময় ধরে রেখেছে দলটি। এদিকে তারেক রহমানের ওমরায় যাওয়ার খবরে দলের মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওমরাহ যাওয়ার হিড়িক পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক সূত্র।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী, দলের আরও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ওমরায় যাওয়ার বুকিং দেওয়া শুরু করেছেন। সবারই টার্গেট যেভাবেই হোক ওমরায় গিয়ে তরেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাওয়ার। দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলছেন, দলের নেতাকর্মীরা তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার ওমরার সময়ে যেন সেখানে ভিড় না জমান এমন দলীয় নির্দেশনা যদি না দেওয়া হয় তাহলে হাজারও নেতাকর্মীর ভিড়ে পরিস্থতি অন্যরকম হতে পারে। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ওমরা করবেন এটি ধরে নিয়েই নেতাকর্মীরা ছক কষে বুকিং প্রতিযোগিতা করছেন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগেই তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ইতোমধ্যে বলেছেন, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যদি তাদের নির্বাচন করতে হয়, তাহলে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। তারা সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এখন তাদের রোডম্যাপ কতটুকু বাস্তবায়ন হয় সেটার দিকেই তাকিয়ে আছে লন্ডন। কমিশন যদি কথা রাখে তাহলে তারেক রহমান ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে প্রস্তুত করা হচ্ছে বাসভবন, অফিস ও বুলেটপ্রুফ গাড়ি।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীই যথেষ্ট নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তার ফেরায় আইনি কোনো বাধা নেই। দেশে ফিরে তাকে আদালত প্রাঙ্গণে যেতে হবে না। রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে গুলশান, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চেয়ারপারসন অফিস। কিংবা অদূরের বাসভবন। সবকিছুই হয়েছে সংস্কার। ঘষামাজা ছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কাজ করা হচ্ছে। জাপান থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে আসা হচ্ছে। দেশে ফিরে তারেক রহমান গুলশান-২ এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে থাকবেন। ১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে এ বাড়িটি বরাদ্দ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, তারেক রহমান নভেম্বরের ২০ থেকে ২১ তারিখের দিকে সৌদি আরব যাবেন। ওমরা শেষে আবার লন্ডনে ফিরবেন। লন্ডনে ফিরে তিনি নভেম্বরের শেষের দিকে কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকার ফ্লাইট ধরবেন। তবে এখনো নির্দিষ্ট দিন চূড়ান্ত হয়নি। তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি নিরাপত্তা কমিটি করা হয়েছে। যখন দেশে আসবেন তখন নিরাপত্তা হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীই যথেষ্ট নয়। এইটা দিয়ে যে পরিমাণ নিরাপত্তা দরকার সেটা কিন্তু দেওয়া সম্ভব না। সরকারকে জানাব, তারা এসএসএফ দেবে, আর্মি দেবে না কাকে দেবে তা সরকার দেখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। শীঘ্রই তার ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমান কবে আসবেন, এটা তার সিদ্ধান্ত। তিনি সঠিক সময়ে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন-এটা পরিষ্কার। দিনক্ষণ তার পক্ষ থেকে বলা হবে। সময়টা খুব বেশি দূরে না, এতটুকু বলতে পারি।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, গুলশানের বাসায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার চলছে। বিদেশ থেকে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম আনা হচ্ছে এবং জাপান থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি শীঘ্রই পৌঁছবে। এর আগে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে। গাড়ির অনুমতি পাওয়া গেছে, তবে অস্ত্রের লাইসেন্স এখনো হাতে আসেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শীঘ্রই দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করে দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেছন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে আসবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফিরে তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালতে তার কোনো ধরনের কোনো ম্যাটার নেই। যেহেতু প্রত্যেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। আর অনেক মামলা রয়েছে যেগুলো জরুরি অবস্থার সময় দায়ের করা হয়েছিল সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সময়ের মামলায় খালাস ও নিষ্পত্তি হয়েছে। তারেক রহমানের দেশে আসতে আর কোনো বাধা নেই।