ঘরবাড়ি-জমি সবই আছে। তবুও নিজেদের ভূমিহীন দেখিয়ে মুজিববর্ষে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছিলেন পটুয়াখালীর বাউফলের শাহ আলম ব্যাপারী, মমিন হাওলাদার ও বশির। তবে নির্মাণের পরপরই তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘর ধসে পড়েছে। একই এলাকার পারভেজ, বজলু তালুকদার, মজিবর প্যাদা, বশির হাওলাদার, অজিবর প্যাদা, মানিক খান ও চুন্নু হাওলাদারসহ অনেক সচ্ছল ব্যক্তির নামে ওই প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে তারা ঘর পেয়েছিলেন। তবে এখন আর তারা ওই ঘরে থাকেন না। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে অধিকাংশ ঘরই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেওয়াল ও মেঝেতে ফাটল ধরেছে। উড়ে গেছে চাল। গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে আছে। মানুষের পক্ষে এসব ঘরে বসবাস করা সম্ভব নয়। ফাঁকা পড়ে আছে অধিকাংশ ঘর। তালা মেরে উধাও হয়েছেন কেউ কেউ।
হবিগঞ্জে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়াদের অনেকেরই বাড়িঘর আছে। কারও আবার জমিজমাও আছে। তাই তাদের ঘর তালাবদ্ধ থাকে মাসের পর মাস। কেউবা আবার গরিব স্বজন বা অসহায়দের দিয়ে ঘরের দখল বজায় রেখেছেন। প্রকল্পের বাসিন্দা শরিফা আক্তার বলেন, বাড়িঘর রেখেও এখানে সরকারি ২ শতাংশ জমি পেয়েছেন সদর উপজেলার গোপায়া গ্রামের ছালেক মিয়া। মাঝে মাঝে আসেন। এখানে যে ফলমূল ফলান তা নিয়ে যান। কিন্তু সারা বছর আর তাদের কোনো খবর থাকে না। ভূমিহীন-ঘরহীন দাবি করে বরাদ্দ পাওয়া কারও আবার নিজস্ব বাড়িঘর আছে। ঘর নিয়ে তারা অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রকল্পের নামে গরিবের সঙ্গে এমন ধোঁকাবাজিই হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে নারগুন ইউনিয়নের শাপলা গ্রামের ৭০ বছর বয়সি নমিজা বেগম গরু বিক্রি করে ঘর বরাদ্দের জন্য চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছিলেন। তবুও তার জন্য বরাদ্দ ঘরটি অজোবালার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে অজোবালার মেয়ের কাছ থেকে সেই ঘর ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন তিনি। একই অভিযোগ রাজমিস্ত্রি শাহিনের স্ত্রী নাসিমা ও গোলাম মোস্তফার স্ত্রী কুলসুম বেগমেরও। তারা প্রত্যেকেই ৮০ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে ঘর কিনেছেন। এমন চিত্র শুধু বাউফল, ঠাকুরগাঁও কিংবা হবিগঞ্জের নয়, সারা দেশে মুজিববর্ষে উপহারের নামে দেওয়া গরিবের ঘরের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে সারা দেশে চার দফায় আড়াই লাখ ঘর দেওয়া হয়েছে। ঘরগুলোর অধিকাংশই এখন ফাঁকা। তালা মেরে অন্যত্র চলে গেছেন উপকারভোগীরা। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার, তৃতীয় পর্যায়ে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ এবং চতুর্থ পর্যায়ে তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিটি ধাপেই ঘর নির্মাণের অর্থ লোপাট হয়েছে। বরাদ্দের অর্ধেক অর্থে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছে ঘর। স্থানীয় প্রশাসন-জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা এমন লুটপাটের ভাগিদার হয়েছেন। গরিবের ঘরের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। নামমাত্র ‘ঘর’ নির্মাণের পরপরই ধসে গেছে অনেক স্থাপনা। ফেটে গেছে দেওয়াল, উড়ে গেছে টিনের চাল। মাত্র তিন বছরেই এসব ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খুঁজে খুঁজে স্থানীয় প্রতিনিধিদের স্বজন ও আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গরিবের ঘর। এ কারণে উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ হয়ে আছে অনেক ঘর। ঘর নির্মাণের নামে লুটপাটের আয়োজন করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ভোটের জন্য ‘ট্রাম্পকার্ড’ মুজিববর্ষের উপহার গরিবের কোনো উপকারে আসেনি। এ অবস্থায় গরিবের সঙ্গে ধোঁকাবাজির এ প্রকল্প ইতোমধ্যে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, গত জুন মাসে প্রকল্প সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রকল্প ঘিরে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে প্রতিনিধিরা জানান, অনেক এলাকায় ব্যক্তির জমিতেও অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে গরিবের ঘর। এখন এসব ঘরে কেউ থাকতে পারছেন না। বাউফলের উপকারভোগী শাহ আলম ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমাদের এখানকার কয়েকটি ঘর মালিকানা জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এখন মালিকরা এসে বলছেন আমাদের জমিতে গাছপালা লাগাবেন না। স্থানীয় জামাল হোসেন খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার পৈতৃক জমি দখল করে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে শতাধিক ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। যার প্রয়োজন নেই তাকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার প্রয়োজন আছে তাকে ঘর দেওয়া হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বাসারচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৯৩টি ঘরের ১৫টি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন সুবিধাভোগীরা। প্রতিটি ঘর ১০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুধু টাঙ্গাইল নয় দেশের অন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর চিত্রও একই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সচ্ছলের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তা গরিবের কাছে বিক্রি করেছেন। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় সেই ঘরও এখন ফাঁকা পড়ে আছে। মুজিববর্ষের উপহারের এসব ঘর এখন মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো ঘর গরু-মুরগির খামার বানানো হয়েছে। অনেক ঘরের টিন, রড এমনকি ইট খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন অনেক ঘরের অস্থিত্বও পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইলের স্টাফ রিপোর্টার জাফর আহমেদ জানান, শুধু বাসারচর আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়, এমন চিত্র জেলাজুড়ে। চিলাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নছিমন বেওয়া নামের এক বৃদ্ধ বলেন, এখানে ৪৯টি ঘর রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি ঘর ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী যারা এই ঘর কেনাবেচা করেন, তাদের নাম বলা যাবে না। তবে প্রকল্পের পর আজও আমাদের জন্য কোনো নির্ধারিত সড়ক করে দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, কয়েক ধাপে জেলার ১২টি উপজেলায় তিন হাজার ৬১৪টি ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গরিবের ঘর সচ্ছলের নামে বরাদ্দ : বড়লেখা প্রতিনিধি আব্দুর রব জানান, এ উপজেলায় গরিবের ঘর দলীয় বিবেচনায় সচ্ছলদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বসবাসরত হতদরিদ্র অনেকেই টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছেন। আবার অনেক স্থানীয় প্রতিনিধি টাকা নিয়েও ঘর দেননি। ড্রেনেজ সমস্যা, খাবার পানি সংকটসহ বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অধিকাংশ ঘর ৩-৪ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কেউ কেউ বিক্রি ও ভাড়া দিয়েছেন সরকারি ঘর। প্রকল্প তালিকার ৪৬ নম্বর উপকারভোগী মৃত জমির আলীর স্ত্রী রয়ছুন বেগম। নিজস্ব পাকা বাড়ি থাকায় তিনি প্রথম থেকেই ঘরে ওঠেননি। তার ঘরটি মাসিক ৫০০ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন আমান উদ্দিন নামে গৃহহীন ব্যক্তির কাছে। ৪৯ নম্বর উপকারভোগী হাসান আলীর পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও মুজিববর্ষের ঘর পেয়েছেন। ওই ঘরে বসবাস করতে দেখা গেছে সোহেল আহমদ ও তার স্ত্রী নাজমা বেগমকে। নাজমা বেগম জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঘর দেওয়ার কথা বলে দুই দাগে তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সবাই ঘর পেলেও তারা ঘর না পাওয়ায় চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি ওই ঘরে (বর্তমানে বসবাসরত) বসবাস করতে দিয়েছেন। ৫০ নম্বর উপকারভোগী ফখর উদ্দিন তার নামে বরাদ্দ ঘরটি সোয়েদ আহমদ নামে এক ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৫৩ নম্বর উপকারভোগী হাওয়ারুন নেছার নামে বরাদ্দের ঘরে বসবাস করছেন দুদু মিয়া নামে এক ব্যক্তি।
সরিষাবাড়ীতে ১৪৬টির মধ্যে ১২৬টি ঘরই ফাঁকা : সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম ঠান্ডু জানান, মুজিববর্ষের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪৬টি ঘরের মধ্যে ১২৬টিই ফাঁকা পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে দুটি ঘর ভেঙে পড়ে আছে। সন্ধ্যা নামলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি থাকে মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। উপকারভোগী রেজাউল বলেন, এখানে আমাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই। ৪টি নদী পাড়ি দিয়ে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে দিনমজুরের কাজ করে জীবন জীবিকা চালাতে হচ্ছে। সরকারিভাবে আমাদের নামে কোনো ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আশপাশে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্গম চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হওয়ায় মাদক সেবন ও মাদক কারবারিরা আস্তানা করে বসেছে।
ঘর বেশির ভাগই পরিত্যক্ত : টাঙ্গাইলের নাগরপুর প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান বকুল জানান, ভারড়া ইউনিয়নের পচাসারুটিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৩টি উপকারভোগীর জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আব্দুল হালিম (ভারড়া) ও মো. সাহাদুল (তেবাড়িয়া) এই দুজন বসবাস করছেন। বাকি ১১টি ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। সহবতপুর ইউনিয়নে বিন্যাওঝা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪২টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১টি ঘর শুরু থেকেই পরিত্যক্ত আছে। অপর দিকে, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ না থাকলেও সেখানে বসবাস করছেন আহাম্মদ আমিন, জোহুরা, রিনা ও সখিনা।
নদীতে বিলীন ঘর, সচ্ছলরা পেয়েছেন বরাদ্দ : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান জাহিদ রিপন জানান, সদরের পশরা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ১৮ ঘরের মধ্যে বেশির ভাগ ঘর রয়েছে তালাবদ্ধ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সবক’টি গৃহনির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্বল্পমূল্যের কাঠ ও টিন। ইটের গাঁথুনিতে সিমেন্ট বালুর পরিমাণ কম থাকায় ইতোমধ্যেই দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। আলফাডাঙ্গার চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল ১৩০টি ঘর। গত দুই বছরের নদীর ভাঙনে প্রায় ১০০ ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। বাকি মাত্র ৩০টি ঘরের বাসিন্দারা থাকছেন আতঙ্কে। সদরপুরের আকোটের চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরে তালা ঝুলিয়ে উপকারভোগীরা চলে গেছেন। ঢেউখালী হরিনা আশ্রয়ণের বাসিন্দা সুমন মাতুব্বর জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও এখন দুর্ভোগের শেষ নেই। ঘরে বসবাসের পরিবেশ নেই।
অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ : বিরল প্রতিনিধি আতিউর রহমান জানান, নোনাগ্রাম বাবুইদিঘি আশ্রমে ৭০টি ঘরের ১৮টিই তালাবদ্ধ। এর মধ্যে খায়রুল, রাজেকুলের ঘরে খড়ি রাখা আছে। আশরাফের ঘরে তালাবদ্ধ অনেক দিন। সেরাজুলের ঘরে চৌকি রাখলেও থাকেন না। সিদ্দিকুল মাঝে মাঝে আসেন আর প্রায়ই নাজমুল নামে একজন থাকেন। চতুর্থ সারিতে ১৪টি পূর্ব-পশ্চিমে নির্মিত ঘরের মধ্যে মোজাফ্ফর মারা যাওয়ায় স্ত্রী ঢাকায় থাকেন এবং ঘরটি ব্যবহৃত হয় না। অধিকাংশ ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঘরের টিন, ইট খুলে বিক্রি : তারাগঞ্জ প্রতিনিধি প্রবীর কুমার কাঞ্চন বলেন, কুর্শা ইউনিয়নের ফরিদাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিনটি ঘরের ইট, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ টিন বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ১৩০টি হতদরিদ্র পরিবার সেখানে বসবাস করার কথা থাকলেও বর্তমানে ৪৭টি পরিবার আছে। বাকি ৮৩টি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘরের ইট, টিন খুলে বিক্রি করা হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০টি ঘর বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ঘরবরাদ্দ নিয়ে সাহেবা বেগম নামের একজন স্থানীয় আলম মিয়ার কাছে মাসে এক হাজার টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। আলম মিয়ার স্ত্রী রেহেনা জানান, বাড়িতে শাশুড়ির সাথে ঝগড়ার কারণে শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভাড়া নিয়ে আছি। একই অবস্থা দেখা গেছে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের উজিয়াল আশ্রয়ণ প্রকল্পে। উজিয়ালে ৩৫টি টিনশেড ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে ১৭টি পরিবার বসবাস করছেন। বাকিগুলোতে তালা মেরে রাখা হয়েছে। ওই প্রকল্পে ২২টি পাকাঘর বরাদ্দ থাকলেও সাতটি পরিবার বসবাস করছে, বাকিগুলোতে তালা মেরে রাখা হয়েছে।
ঘর সচ্ছল ও আত্মীয়স্বজনদের দখলে : দাগনভূঞা প্রতিনিধি মো. আবু তাহের জানান, এ উপজেলায় ৪৭১টি ঘর ভূমিহীনদের বদলে সচ্ছলদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থের বিনিময়ে জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়রাও পেয়েছেন ঘর। তবে ঘরগুলো নিম্নমানের হওয়ায় এবং বরাদ্দকৃতরা প্রকল্পে না থেকে তাদের বাড়িতে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ আছে।
ঘর আছে রাস্তা নেই : হিজলা প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন জানান, এ উপজেলায় ৬০৩টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ গ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই। নেই মসজিদ বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। শুধু তাই নয়, এক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্য গ্রামে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে সেখানে কোনো কর্ম না থাকায় বরাদ্দ পেয়েও তারা ঘরে থাকছেন না। কোলচর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাসরত ১০ পরিবারের মধ্যে চারজন নেই। হরিনাথপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ৪২টি ঘরের মধ্যে ১০টিতে তালা ঝুলানো। একইভাবে ঘোষেরচর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অধিকাংশই থাকছেন না।