 
              ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট ও আসন সমঝোতার রাজনীতি চলমান। প্রতি নির্বাচনের আগেই রাজনীতিতে এই ভাঙা গড়ার খেলা হয়। এবার জোটের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি কদর তরুণদের সমন্বয়ে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এনসিপিকে নির্বাচনি মোর্চায় পাশে পেতে চায়। আবার দেশের বৃহৎ ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত ইসলামীও নাহিদদের সঙ্গে রাখতে চায়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দরকষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এনসিপি। দলটি কার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত জোট করে কিংবা আসন সমঝোতার পথে এগোয় সেটি দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। বিএনপির দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে দলটির দূরত্ব তৈরি হয়। জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোট ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। নিদেনপক্ষে তারা সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকতে চায়। রাজনৈতিক এমন কৌশলের অংশ হিসেবেই তারা নিজেদেরকে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাহির করেছে। আনুপাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, গণভোটসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে তাদের চরম দ্বন্দ্ব। এমনকি পরবর্তীতে এনসিপির সঙ্গেও তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট ফুটে উঠে।
জামায়াত এনসিপির দূরত্ব কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দলটি তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।দুদলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে পর্দার অন্তরালে যোগাযোগ হচ্চে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এনসিপিকে নিজেদের নির্বাচনি জোটে পেতে চায় বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীও পিছিয়ে নেই। তারাও এনসিপিকে তাদের নির্বাচনি জোটে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য উভয় দল থেকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা পর্দার আড়ালে এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জোট, মহাজোট, আসন ভাগাভাগি এবং প্রার্থী মনোনয়নের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ। উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে দুটি বড় রাজনৈতিক দলের কোনো একটিতে ভিড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ আছেন নিরাপদ প্রস্থানের চিন্তায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক যুগ্ম-আহ্বায়ক যুগান্তরকে বলেন, নিজেদের সঙ্গে জোট না করলেও এনসিপি যাতে কোনোভাবেই জামায়াতের জোটে যোগ না দেয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনসহ অন্তত ২০টিতে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে মন্ত্রিসভায় এনসিপির প্রতিনিধি রাখা হবে-এমন কথাও বলা হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকার বিষয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী মতামত দিয়েছেন। এছাড়া ‘আসন সমঝোতা’ কথাটির সঙ্গেও আমরা একমত নই। তবে অভিন্ন এজেন্ডা, ঐক্য এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে।
এনসিপিকে নির্বাচনি জোটে টানার আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হবো কি হবো না, তারা হবে কি হবে না-সেটি রাজনীতির মাঠে নির্ধারিত হবে। এসব বিষয়ে কোনো কিছুই আগে থেকে বলা যায় না।
 
       
                 
                
 
                                                  
                                                  
                                                  
                                                  
                                                 