Image description
 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি সরকারের কাছে হস্তান্তর করার পর থেকেই তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। সনদ ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে- এমন অভিযোগ করে বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে। একই সঙ্গে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আনা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। তারা অভিযোগ করছেন, সংবিধান সংশোধন পরিষদ গঠনে কোনো আলোচনা হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে নোট অব ডিসেন্টের জায়গাগুলো না রাখার পাশাপাশি গণভোটের সময় ও আদেশ জারির পন্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরিষ্কার না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। 

এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের বিষয়ে বিএনপির ঘোর আপত্তি থাকলেও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের দাবি জানিয়ে মাঠে নেমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসিতে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ৩ নভেম্বর বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছে দলগুলো। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী সনদ বাস্তবায়নের আদেশ আজ শুক্রবারের মধ্যে জারি করার জোর দাবি জানিয়েছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত‍্যে পৌঁছাতে ব‍্যর্থ হলে নির্বাচন অনিশ্চিত এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হতে পারে বলে মনে করছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। 

Kiswan

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি তথা গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানে সরকারের পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেবেন বলেও জানানো হয়েছে। 

 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী ও উত্তেজিত ভূমিকা নিয়েছে বলে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি এ রকম ভূমিকা নেন, সরকার কী করবে, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। এতদিন আলোচনার পর যদি ঐকমত্য না আসে, তো আমরা আসলে কীভাবে কী করব, সত্যি আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।

আলাপ-আলোচনার পর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে অনৈক্যের সুর হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তীব্র বিরোধের মধ্যে কীভাবে সমঝোতার দলিল পাস হয়, এটা দুরূহ একটা চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে এনে দিয়েছে।

নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। এরূপ প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩-এ সংযোজিত করা হয়েছে। সরকারের এ রকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই। সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুসারে ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত। অতএব তা জারি করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।

জুলাই সনদের সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে। জবরদস্তিমূলকভাবে তা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘ প্রায় এক বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন। অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি। এই বাস্তবায়ন আদেশে (সুপারিশ) বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। তারা আলাদাভাবে সংসদ সদস্য ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে অভিহিত হবে। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না। আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়নি। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হওয়ার অবকাশও ছিল না। এ-জাতীয় কোনো সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করতে হলে তা-ও পরবর্তী জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলা হয়েছে, উক্ত বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান হওয়ার আগে এ ধরনের আগাম পদক্ষেপ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময়স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগসহ একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজন বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যেসব সুপারিশ করেছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত রাখা হয়নি। তিনি বলেন, আমার হাতে যে জুলাই জাতীয় সনদের বইটা দেখছেন, এখানে সংস্কার কমিশন এবং অন্যদের প্রস্তাবের বিপরীতে এগুলো লেখা হয়েছে। এখানে নোট অব ডিসেন্ট শুধু আমরা দিইনি, এখানে বিভিন্ন দল বিভিন্ন দফায় বিভিন্ন রকমের নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। সেটা এভাবেই উল্লেখ আছে এবং দফাওয়ারি এ কথাগুলোই আছে। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য এগুলো কি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল না? কিন্তু তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) জুলাই জাতীয় সনদের পুস্তকের ডানপাশের সমস্ত মতামত বাদ দিয়ে দিয়েছে। তারা শুধু নিজেদের প্রস্তাবগুলোর ওপরে একটা তফসিল রচনা করেছে। তিনি বলেন, ৪৮টা দফা দিয়ে সেই তফসিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ৪৮ দফার ওপরেই গণভোট হবে। এখানে কে কী মতামত দিল, কীভাবে উল্লেখ করা হলো, কীভাবে সম্মত হলো, কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

আজকের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দাবি জামায়াতের

এদিকে আজ শুক্রবারের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানায় দলটি। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াত রাষ্ট্র সংস্কারে দেওয়া ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। সেজন্য আগামীকালের (আজ) মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সরকার চাইলে আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেও সেটি করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সময়ক্ষেপণ না করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আহ্বান জানিয়ে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দেরি হলে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জনগণের আস্থা হারাবে। জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর গণভোটের আয়োজন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন কিংবা নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে। কারণ একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ দলের প্রার্থীকে জেতাতে ব্যস্ত থাকবেন। এর ফলে গণভোটের গুরুত্ব কমে যাবে।

গণভোটের পর ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এমন কোনো বিষয় যাতে সামনে আনা না হয়, যে কারণে নির্বাচন সংশয় বা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারিই উপযুক্ত সময়। 

বিএনপির জন্ম হ্যাঁ ভোটে, মৃত্যু হবে না ভোটে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপির আর ‘না’ বলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মধ্য দিয়ে। এবার যদি তারা ‘না’ ভোটে অনড় থাকে তাহলে দলটির মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তারা যেন ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা না করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, বিএনপির ‘না’ বলার আর কোনো পথ নেই। কারণ, তারা ইতিমধ্যে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছে। তারা ‘বিবাহে রাজি হয়েছে, কাবিননামায় সইও’ করেছে। এখন তাদের ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই। তাদের এটা আগেই ভেবেচিন্তে করা উচিত ছিল। 

ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন না হলে তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সরকার ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারলে দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায়, এর দায়ভার প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে। আইন উপদেষ্টার ওপর আমাদের আস্থা নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে শহীদ মিনারে গিয়ে মানুষের মাঝে সংস্কার আদেশ জারি করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হতে পারে

রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করতে হতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সরকার যখন গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে, তা সব রাজনৈতিক দল মেনে নেবে। কিন্তু ঐকমত্যে ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে ভয়ানক জটিল করে তুলতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর দাবি নভেম্বরেই গণভোট। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত ও ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে : গণসংহতি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ সনদের বাস্তবায়নকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে বলে মনে করে গণসংহতি আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান (রুবেল) বলেন, ঐকমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ কমিশনের বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কিছু সুপারিশ গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতির অনুসরণ করে না। এই সুপারিশমালা বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যেটা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে আশঙ্কার মুখে ফেলছে। সেসব বিষয়ে সঠিকভাবে ওয়াকিবহাল না হয়েই সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে গণভোটে তা নিরসনের চিন্তা বাস্তবোচিত নয়।

নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট চায় জামায়াতসহ আট দল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও আগামী নভেম্বরে গণভোট চেয়ে ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া জোট করলেও নিজ প্রতীকে ভোটের বিধানসহ সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বহাল চায় দলগুলো। 

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সিইসির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দলগুলোর পক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবির কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালউদ্দিন ও মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম প্রমুখ।

জামায়াত-এনসিপি ছাড়া সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে সরকার

জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া অন্য সব দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। বৃহস্পতিবার নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি ।

চার মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করার সক্ষমতা সরকারের আছে কি না- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ১৪ মাসে সরকার তার ফিটনেস তৈরি করতে পারে নাই। হাতে সময় আছে মাত্র চার মাস। এই চার মাসে দুটো নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা সরকারের আছে? সরকার বরং নভেম্বরে গণভোটের প্রসঙ্গ এনে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যার মাধ্যমে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু নোট অব ডিসেন্ট বাদেই সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে, এক্ষেত্রে ৯ মাস রাষ্ট্রের অর্থ কেন অপচয় করা হলো? বরং ৮৪টি বিষয়ে ৯ মাস আগেই গণভোট নিতে পারত না?