আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতির মাঠে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ঘিরে। বিশেষ করে জোটবদ্ধ দলগুলোকে নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার ধারাটি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী।
গেল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধিত আরপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, ভবিষ্যতে কোনো জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দল জোটের সাধারণ প্রতীক নয়, বরং নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবে।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে সরব হয় বিএনপি। দলটি গত মঙ্গলবার রাতে আইন উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানায়, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর নিজেদের বিবেচনায় জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনীর ফলে জোটবদ্ধ দলগুলোকে নিজেদের প্রতীক ব্যবহার করতে বাধ্য করা হলে তা রাজনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করে বিএনপি। তারা আরও জানায়, জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক ব্যবহারের অধিকার থাকা উচিত।
অন্যদিকে, বিএনপির এই দাবির বিরোধিতা করেছে এনসিপি। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, “যদি কোনো দলের কারণে সরকার এই সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো থেকে সরে আসে, তাহলে স্পষ্ট হবে যে সরকার লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। এটা জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া হতে পারে না।”
একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও বিএনপির দাবির বিরোধিতা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দলটির সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, “একটি দলের পক্ষ থেকে আবারও সংশোধনের দাবি তোলা হয়েছে। এমনকি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লঙ্ঘন করে একজন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের এক নেতার ‘জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট’ হয়েছে বলেও তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সংশোধিত বিধানের ভিত্তিতেই নির্বাচন করতে হবে।”
এই ধারাটি নিয়ে তিনটি দলের ভিন্ন অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র করতে পারে।