জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক আদর্শিক সম্পর্কের কারণে বিএনপির সঙ্গে ইসলামপন্থী দলগুলোর ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই সম্পর্কের সেতুবন্ধন অনেকটাই ভেঙে যায়। পরবর্তীতে পিআরসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হওয়ার পর ধর্মভিত্তিক দলগুলো পরস্পরের আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আদর্শিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে। কার সঙ্গে জোট হবে বা সমঝোতা হবে, তা সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দেশের কওমি ঘরানার অধিকাংশ বড় দল দেওবন্দ আদর্শের অনুসারী, যাদের সঙ্গে জামায়াতের মওদুদী মতবাদ নিয়ে দীর্ঘদিনের মতভেদ রয়েছে। তবে সেই আকিদাগত বিভেদ সরিয়ে নির্বাচনী সমঝোতায় আসতে চায় ইসলামীপন্থী পাঁচটি দল। তিনশ আসনের মধ্যে অন্তত একশ আসন দাবি করছে ইসলামী আন্দোলন, মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস চাইছে ৫০টি আসন, আর বাকি তিন দলের দাবি ৭০ থেকে ৮০টি আসন।
দলগুলোর নেতারা জানান, আকিদাগত মতভেদ ভুলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে তারা জোট নয়, আসনভিত্তিক সমঝোতায় যেতে চান। তবে বিএনপি শিবিরে এই নতুন জোট তেমন কোনো উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে এবং শরিকদের কাছে শতাধিক আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, বৃহত্তর ইসলামী স্বার্থে আমরা এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। অর্ধশতাধিক প্রার্থী রয়েছে, যারা শক্ত অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, একটি আসনে ইসলামের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবে। যেখানে যে দল ভালো সম্ভাবনা তৈরি করতে পেরেছে, সেখানে তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেউ বেশি পাবে, কেউ কম পাবে—এটাই বাস্তবতা। তফসিল ঘোষণার পরপরই আমরা সমঝোতার অবস্থান স্পষ্ট করবো।
অন্যদিকে, এমন কৌশলের পাল্টা হিসেবে দেওবন্দ আদর্শের বিভিন্ন ইসলামী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে কওমি ঘরানার সবচেয়ে পুরনো দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর চার নেতাকে নির্বাচনী কাজে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভোটের মাঠে জামায়াত জোটের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তার ভাষায়, “অনেক জিরো প্লাস জিরো প্লাস জিরো ইজ জিরো। তাই এগুলো নিয়ে আমরা অত চিন্তা করি না। বিএনপিও তো ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। নির্বাচনের আগে ইসলামের জিকির তুলে রাজনীতি করা দেশের জন্য সঠিক আচরণ নয়। আর জামায়াতকে আমরা এখন আর তেমন শক্তিশালী দল হিসেবে দেখি না।”
এদিকে, আসন সমঝোতা হলেও ইসলামীপন্থী জোটে এখনো একক কোনো নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। জোট ক্ষমতায় গেলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেতা, সে বিষয়েও এখনো সুরাহা হয়নি।