Image description
 

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, আসিফ নজরুল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন। তার এই বক্তব্য ঘিরে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

 

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল কার কাছে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন— এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

বুধবার বিকালে রাশেদ খান নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ প্রশ্ন তুলেন।

রাশেদ খান বলেন, ‘অথচ ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে বহাল রেখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন নাহিদ ইসলাম। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো আছে। এছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। ৪ আগস্ট তাকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেন তারা।’

রাশেদ বলেন, ‘অর্থাৎ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকা সময়েই নাহিদ ইসলামরা সরকার গঠনের ছক তৈরি করে ফেলেন। যদিও এসব নিয়ে বেশ অস্পষ্টতা আছে। তবুও আমার প্রশ্ন হলো, তখন কি আসিফ নজরুল স্যার এটি জানতে পেরে নাহিদ ইসলামকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা না করে তাকে করা হোক? এ ধরনের কোনো বক্তব্য নাহিদ ইসলাম কোনো দিন দেননি, গণঅভ্যূত্থানের ইতিহাস নিয়ে আসিফ মাহমুদ বই লিখেছেন সেখানেও এমন কিছু বলা নেই। এনসিপির নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাহলে এতোদিন পর এমন উদ্ভট দাবি তুললেন কেন? কোন অসৎ উদ্দেশ্যে তার উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য?’ 

রাশেদ বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট দুপুর বেলা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কল করা হয় আসিফ নজরুল স্যারকে। তাকে বলা হয়, সেনাবাহিনী এই রক্তপাত ও হত্যা বন্ধ চায়। তাকে  ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। তখন আসিফ নজরুল স্যার অনেকের পরামর্শে রক্তপাত ও গণহত্যা বন্ধে মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ নেন। সেসময় প্রতিটা টেলিভিশনে সংবাদ ভেসে ওঠে, আসিফ নজরুলের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক, জরুরি ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান। সেসময় চারিদিকে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ। হাসিনা ইতোমধ্যে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ছেড়েছে। সেনাপ্রধান ও আসিফ নজরুল স্যারের সমালোচনা থাকবে, থাকাও স্বাভাবিক। দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা কার না হয়? কিন্তু সেদিন রক্তপাত ও হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগকে কোনোভাবেই নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই। আরও কয়েকহাজার মানুষ মারা গেলে কি খুব ভালো হতো? এখন অনেকে অনেক পন্ডিতি কথাবার্তা বলবেন। কিন্তু তারা কি আরও রক্ত চেয়েছিলো বা বিপ্লব করতে অস্ত্র হাতে মাঠে নেমেছিলো?’

 

রাশেদ আর বলেন, ‘যাইহোক, এনসিপি আইন উপদেষ্টাকে গণঅধিকার পরিষদের প্রতি বায়াসড বলে, তার সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে। হ্যা, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আমার ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর থেকে সম্পর্ক। মূলত আমার মুক্তির জন্য তিনি আমার মা-বাবার সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলেন, ছাত্রলীগের দ্বারা অপদস্ত হয়েছিলেন। তিনি নুরুল হক নুর, হাসান মামুন ও আমাদের তখনকার ছাত্র সংগঠনের নেতা আখতারের পক্ষেও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমনকি নাহিদ আসিফসহ ৬ সমন্বয়ক পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাদের মুক্তির জন্য তিনিই সংবাদ সম্মেলন করেন, রাজপথে নামেন।’ 

সবশেষ রাশেদ বলেন, ‘প্রতিটা আন্দোলন এবং ছাত্রদের আন্দোলনে আসিফ নজরুল একজন যোগ্য অভিভাবক হিসেবে পাশে ছিলেন। আসিফ নজরুল স্যারের ভুল থাকলে সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন এমন পাগলের প্রলাপ পাড়িয়েন না।’