ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, মানুষের মুখোমুখি হবেন না, তাহলে পরিণত ভয়াবহ হবে। গণভোট আগে-পরে বিষয় নয়। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় যেন হয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আসিফ নজরুল স্যারের প্রতি আমাদের আস্থা নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন তার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি। আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা নিজ দায়িত্বে জুলাই সনদ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কার্যকর করা হোক। সংবিধান সংশোধন বিল ও সংসদ সদস্যদের আইনি অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঢাকায় এক লিখিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের পদ শূন্য হওয়ার বিষয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে এনসিপি।
দলটির নেতারা বলেন, “সংবিধানের ৮৪(৪) ধারা অনুযায়ী সংসদের মেয়াদকালে সরকার পরিবর্তন হলেও সংসদের বৈধতা বহাল থাকে। এই আইনি অবস্থান স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।”
এনসিপি দাবি করে, সংসদ এখনো কার্যকর, তাই সংসদ সদস্যদের পদ শূন্য ঘোষণার প্রশ্নই আসে না। তারা বলেন, “আইনগতভাবে সংসদের অস্তিত্ব নিয়ে যারা বিভ্রান্তি তৈরি করছেন, তারা আসলে গণতান্ত্রিক ধারাকে দুর্বল করার অপচেষ্টা করছেন।”
দুই ধরনের সংশোধন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করল এনসিপি
বিবৃতিতে এনসিপি উল্লেখ করে, দুই ধরনের সাংবিধানিক সংশোধন প্রক্রিয়া বিদ্যমান—একটি স্থায়ী কাঠামোগত সংশোধনের জন্য এবং অন্যটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বা সংসদের কার্যক্রম চালু রাখার প্রক্রিয়া। দলটির ভাষায়, “সংবিধান সংশোধন মানেই সংসদ ভঙ্গ নয়। বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এটি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া।”
দলটি আরও জানায়, ৮(৪) ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদের মেয়াদে সাংবিধানিক কাঠামো সংস্কার বা বিল পাসের অধিকার বর্তমান সংসদের আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা আইনগতভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা না করা হয়।
জনগণের সামনে স্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি
পাটোয়ারী প্রশ্ন তোলেন,“বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি, সংসদ ভঙ্গ হয়েছে কি না এবং সরকার কিভাবে সংবিধান অনুসারে বিল পাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।” তারা মনে করে, সরকার ও আইন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে এবং বিভ্রান্তি দূর হবে।
এনসিপির তিন দফা প্রস্তাবনা:
১. সংসদ সদস্যদের আইনি অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে আইন কমিশনের মাধ্যমে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে হবে।
২. সংবিধান সংশোধন বিলের খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে।
৩. সরকারকে সংবিধান অনুযায়ী সংসদের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান
এনসিপি বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংবিধান সংশোধন বিলকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে তা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সংবিধান হলো জনগণের চুক্তিপত্র, এর অপব্যাখ্যা জাতির ক্ষতি ডেকে আনবে।”
পাটোয়ারী আরও বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। সরকারকে আহ্বান জানায়—সংবিধান সংশোধন বিলের আলোচনাকে উন্মুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
শীর্ষনিউজ