গভীর রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কয়েকজন নেতাকর্মীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের জাবি শাখা সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে 'হটাও ইউনূস বাঁচাও দেশ' ব্যানারে ৪ জনের একটি মিছিল পোস্ট করলে বিষয়টি সামনে আসে। মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের সহ -সভাপতি ও জুলাই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের সরাসরি হামলায় জড়িত এনামুল ও সোহেল রানাকে চিহ্নিত করা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ও বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে একটি মোটরসাইকেল বিক্ষোভ শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে বিশমাইল প্রবেশ পথ দিয়ে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল চত্ত্বরে শেষ হয়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অপতৎপরতা দেখা যাচ্ছে কিছুদিন থেকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ৫ আগস্ট গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও একজন ছাত্রলীগকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যেকোনো অপতৎপরতার জবাব দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সবসময় প্রস্তুত। ক্যাম্পাসের যেখানেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পাওয়া যাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।
তিনি ছাত্রলীগ ইস্যুতে জাকসুকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে রাত ৯ টার দিকে ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে ও জুলাই আন্দোলনে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রশক্তি জাবি শাখার নেতাকর্মীরা।
রাত সোয়া দশটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবদ্যাল কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নেতৃত্বও বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নির্বাচিত ছাত্রনেতারা। এসময় জাকসুর নেতারা জানান বাংলাদেশে ছাত্রলীগ আর কেয়ামত পর্যন্ত ফিরে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগের এই গোপন তৎপরতাকে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতারই ফল বলে অ্যাখ্যা করেন তাঁরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সমস্ত গোপন তৎপরতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন জাকসুর নেতারা।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী মানববন্ধনে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের মিছিল করার আস্ফালন বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকে দেওয়া হচ্ছে। জুলাইয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ঘাম ছুটাতে হয় এবং জাকসু নির্বাচন পরবর্তী হামলার সহযোগী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের এখনো প্রশাসনের কাছে ধরণা দিতে হয়।
তিনি বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, আপনারা নিশ্চিত করুন আপনাদের সঙ্গে কি স্বৈরাচারী সরকারের প্রেম রয়েছে নাকি পরকীয়া রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো ছিটাফোঁটাও আমরা দেখতে চাই না। আওয়ামী লীগের দোসর প্রশাসনের মধ্যে যারা ঘাপটি মেরে রয়েছে, যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার গ্রাউন্ড তৈরি করছে তাদের দিবাস্বপ্ন এই বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা প্রথম ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছিল তাঁরা পূরণ হতে দেবে না।
এসময় তিনি বিশ্বিবদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদার ও আওয়ামী দোসরদের প্রশাসন হতে অপসারণ করার আহ্বান জানান।
জাকসু সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রক্ত তাদের হাতে লেগে আছে। সেই রক্তের দাগ এখনো শুকাই নাই।
মানববন্ধনে, গতকাল রাতে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তাদের ভূমিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধননের সংহতি জানিয়ে জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জার। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ কেয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। ১৫ জুলাই সম্মিলিত শিক্ষার্থীরা যেভাবে ছাত্রলীগকে মোকাবেলা করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছিল আবারও আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ছাত্রলীগকে মোকাবেলা করবো এবং এই বাংলাদেশে ছাত্রলীগের করব রচনা হবে। ছাত্রলীগের হাতে যে রক্ত লেগে আছে সেই রক্তরঞ্জিত হাতকে আর বাংলাদেশে ঠাঁই দেওয়া হবে না।