জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনোয়ারা উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে নেতৃত্ব ও পদ-পদবি নিয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি উপজেলা কমিটির গঠনের পর যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ ও পদ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) মো. নাঈম উদ্দীন। গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) ঘোষণাটি প্রকাশের পর দলটিতে শুরু হয়েছে উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি।
দেলোয়ারের অভিযোগ, ‘ভিত্তিহীন ও ভুয়া নোটিশ’ যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, তার নামে প্রচারিত নোটিশটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অসত্য ও ভুয়া। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক জুবায়ের আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আমার নাম ব্যবহার করে ছড়ানো কারণ দর্শানো নোটিশটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা কমিটি না থাকায় উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কেন্দ্রীয় অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবৈধ। সবাইকে অনুরোধ করছি, ভুয়া কাগজে বিভ্রান্ত না হয়ে সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হোন।’
নোটিশে কী বলা হয়েছিল?
উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) মোহাম্মদ নাঈম উদ্দীন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, গণমাধ্যমের বরাতে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে দলের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে পদ স্থগিত করা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘দেলোয়ারকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।’ এ নোটিশে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, শৃঙ্খলা কমিটি ও অঞ্চল তত্ত্বাবধায়কের প্রতিও অনুলিপি পাঠানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা সমন্বয় কমিটি সূত্র বলছে, জেলা কমিটি না থাকায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নোটিশটি দেয়া হয়েছে। দেলোয়ার কমিটি গঠনের পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর চড়াও আচরণ থেকে শুরু করে না না ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো কাজ করেছে। দলীয় এক কর্মীর গায়ে হাত তোলারও অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে নোটিশদাতা মোহাম্মদ নাঈম উদ্দীন, যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) বলেন, ‘কমিটি গঠনের পর থেকে তিনি নানা শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে লিপ্ত হয়েছেন৷ নোটিশটা আমি দিয়েছি এমনটা নয়, অন্যান্যদের মতামতের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ জেলা কমিটি না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দপ্তরের দায়িত্বে থাকায় আমার সই দেয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী লায়ন মোহাম্মদ উল্লাহ মাহমুদ বলেন, ‘আমিসহ সকলের মতামতের ভিত্তিতে নোটিশটি দেয়া হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গৃহীত হবে, সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত ব্যক্তি বাছাই করে কমিটি হয়েছে আশা করি সংগঠন পরিচ্ছন্ন ও প্রস্ফুটিত হবে।’
কেন্দ্রীয় প্রতিক্রিয়াও একই, ‘জেলা কমিটি না থাকায়’
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক জুবায়ের আরিফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেনের বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ জারির বিষয়টি আমাকে জানিয়ে করুক বা না জানিয়ে করুক। সেটা কোনো বিষয় না। আমাদের জেলা কমিটি না থাকায় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমাদের জেলা কমিটি দেয়া হবে। জেলা কমিটি দেয়া হলে আশা করি এই সমস্যার সমাধান হবে।’
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির আনোয়ারা কমিটি গঠনের অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিভাজন সংগঠনের ঐক্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের মতে, নতুন কমিটি ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নেতৃত্বে বিভ্রান্তি ও ক্ষমতার টানাপোড়েন দলের ভেতর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
শেষে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সবসময় দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যারা ভুয়া নোটিশ প্রচার করছে তারা সংগঠনকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আনোয়ারা এনসিপিকে শক্তিশালী করে তুলব।’