Image description

খুলনা বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা নগর বিএনপির দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের সাধারণ সম্পাদক /সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। আগের দিন রবিবার দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানও আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। এডভোকেট  ফজলুর রহমান ছিলেন  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। সেই পদসহ সকল পদ থেকে তাকে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছ বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে আলোচিত এই দুই নেতাকে চমক হিসেবে দেখছেন দলের নেতাকর্মীরা।

সোমবার বিকাল ৪টায় প্রথমে ৪টায় বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দিয়ে এ মতবিনিময় শুরু হয়। ওই দুই বিভাগের পর হয় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় খুলনা ও সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়।সবশেষে শুরু হয় ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়। 

কোনো পদে না থেকেও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতবিনিময়ে ডাক পেয়েছেন খুলনার আলোচিত ও প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময়ে মঞ্জুর উপস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সরব হয়ে উঠেছেন তার অনুসারীরা।

খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। ৪৬ বছরের বিএনপির রাজনীতির ৩০ বছরই ছিলেন প্রথমে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পরে সভাপতি। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্র থেকে করা আহ্বায়ক কমিটিতে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদও হারান। বাদ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও। এরপরও দমে না গিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব সময় সরব থেকেছেন। প্রতিটি কর্মসূচি নিজের অনুসারীদের নিয়ে পালন করেছেন। 

১৯৯২ থেকে ১৭ বছর ছিলেন খুলনা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর ছিলেন সভাপতি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন মঞ্জু। ১২ ডিসেম্বর দলের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময়ে ডাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমি কখনোই বিএনপির বাইরে যাইনি। এক দিনের জন্যও দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি। কোনো ধরনের পদপদবি ছাড়াই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থেকে বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাড়াই বিএনপির ত্যাগী কর্মী। কারণ তাদের কোনো ধরনের পদ ছিল না; চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।

তিনি বলেন, ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকে আমাকে ডাকার কারণে খুলনা বিএনপিতে অন্যরকম আলোচনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিএনপিতে প্রাণ ফিরে এসেছে। আমি আগের মতো দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি।

এদিকে, আগের দিন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতবিনিময়ে ডাক পেয়েছিলেন বিএনপির আরেক আলোচিত নেতা এডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সাম্প্রতিক রাজনীতিতে তার কিছু বিতর্কিত ভূমিকার ও বক্তব্য বিএনপিকে বিব্রত করে তোলে। ফলে গত ২৬ আগস্ট দলের সব পদ থেকে তাকে তিনমাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়, এখনও যা বহাল আছে। তবে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আগেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন ফজলুর রহমান। রবিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন তিনি। বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়টি সোমবার (২৭ অক্টোবর) নিশ্চিত করেন ফজলুর রহমান। 

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমার আসন থেকে কতজন প্রার্থী ওই মিটিংয়ে ছিল, সেটা আমি জানি না। আমাকে ডেকেছে, আমি গেছি। আর কারা প্রার্থী, সেটা আমি জানি না। এসময় ‘দল থেকে তো আপনার সব পদ স্থগিত করা হয়েছিল, এগুলো কি আবার সক্রিয় করা হয়েছে’, জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন , এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দেবো না। 

পদ স্থগিতের আগে ২৪ আগস্ট ফজলুর রহমানের নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে বিএনপি। নোটিশের লিখিত জবাব না দিয়ে তিনি সময় বাড়ানোর আবেদন করেন, যা বিবেচনায় নিয়ে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়। পরে তিনি নোটিশের জবাব দিলেও তা দলীয় হাইকমান্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ফলে, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সব দলীয় পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।