Image description

রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের সংগঠন এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) একাংশ। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সংগঠনটির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কায়সার, সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, কৃষিবিদ সবুর, আশরাফ ও টিপুর নেতৃত্বে ৭০ থেকে ৮০ জন ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান।

তারা কেআইবির প্রশাসক লে. কর্নেল (অব.) মো. আব্দুর রব খানকে তাঁর দপ্তরে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে যেন কেআইবিতে না আসেন, সে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়। এ সময় তারা ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ও অফিসকর্মীদের জোর করে বের করে দেন। প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের নামফলক ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এ সময় নিচতলার সিসি ক্যামেরার কম্পিউটার থেকে হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যান।

 
 

ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রাতেই তেজগাঁও থানায় মামলা করে কেআইবি কর্তৃপক্ষ। মামলায় এ্যাবের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কায়সার, সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, কৃষিবিদ সবুর, আশরাফ, টিপুসহ অজ্ঞাত ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রায় ১৬ বছর পর কেআইবিতে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লুৎফুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন এখনও আনুষ্ঠানিক তপশিল ঘোষণা না করলেও ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে।

এ নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের সংগঠন এ্যাব গত ২০ অক্টোবর খামারবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেআইবির নির্বাচন না করার দাবি জানান এবং বর্তমান প্রশাসকের পদত্যাগ দাবি করেন। 

 

সমাবেশে এ্যাবের আহ্বায়ক ড. কামরুজ্জামান কায়সার ও সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বিপ্লব নেতৃত্ব দেন। সমাবেশের পর এ্যাব নেতারা সমাজকল্যাণ-বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খানের সঙ্গে দেখা করেন।

সোমবার দুপুরেও এ্যাব নেতারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খানের সঙ্গে দেখা করে প্রশাসক অপসারণের দাবি তোলেন। এর পরপরই বিকেলে কেআইবিতে ভাঙচুর হয়। কেআইবি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ্যাব নেতাদের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন লোক এসে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেন। তারা গালাগাল করতে থাকেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, অ্যাডমিন অফিসার সৈয়দ ইমরুল কায়েসসহ অন্য কর্মীদের বের করে দেন। তারা সিসি ক্যামেরা ভেঙে নিয়ে যান। নিচতলায় সিসি ক্যামেরার কম্পিউটারের সব হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যান। ভেঙে দেন অ্যাক্সেস কন্ট্রোল। প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনের রুমের নামফলকও ভেঙে দেন।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা সরে যান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা কেআইবিতে গিয়েছিলাম। প্রশাসনিক অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছে।’ 

তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কেআইবি কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের কেউই ছাড় পাবে না।

কেআইবির প্রশাসক লে. কর্নেল (অব.) মো. আব্দুর রব খান বলেন, ‘এক দল লোক হঠাৎ এসে ভবনে ভাঙচুর চালায়। আমাকে কেআইবি ছাড়ার হুমকি দেয়। সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। সরকার যতক্ষণ রাখবে, আমি দায়িত্বে থাকব। হুমকি দিয়ে সরানো যাবে না।’ তিনি বলেন, ১৬ বছর ভোটবঞ্চিত থাকা কেআইবিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। ৯ মাসে সংগঠনের আর্থিক অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেছি। অথচ ৯ মাসে কেউ আমার পদত্যাগ দাবি করেনি। এখন নির্বাচন ঘিরে একটি গ্রুপ বিশৃঙ্খলা করছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, গত ১৭ জানুয়ারির সংঘর্ষের পর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা কেআইবি পরিদর্শন করে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রশাসক নিয়োগের নির্দেশ দেন। এখন প্রশাসক নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। একটি পক্ষ এ উদ্যোগকে বাধা দিতে চায়। বিষয়টি উপদেষ্টা-সচিব পর্যায়ে দেখা হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ-বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, প্রায় ৩৩ হাজার কৃষিবিদের প্রাণের সংগঠন কেআইবিতে দীর্ঘদিন দুর্বৃত্তায়ন চলেছে। আমরা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা মেটানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ভাঙচুরের মতো ঘটনা দুঃখজনক। যারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

হামলা-ভাঙচুর নিয়ে এ্যাবের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, সাধারণ ভোটাররা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেআইবিতে ভোট চান না। কৃষিবিদরা তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমরা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। ভাঙচুর কারা করেছে, জানি না।