ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ৩ হাজার ৪১২ টাকা। অথচ সমাবেশ মঞ্চে সুনামগঞ্জ–১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির এক নেতাকে নির্বাচনে খরচের জন্য ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন নূর কাসেম (৩৭) নামের এক কর্মী।
সুনামগঞ্জ–১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতার নাম কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি তাহিরপুর উপজেলায়।
গতকাল শনিবার বিকেলে নির্বাচনী এলাকা জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে আয়োজিত এক সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির কর্মী নূর কাসেম নির্বাচনে খরচের জন্য কামরুজ্জামানের হাতে ১০ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। চেকটি হাতে নিয়ে সমাবেশে থাকা নেতা–কর্মীদের দেখান কামরুজ্জামান।
নূর কাসেম নামের বিএনপির ওই কর্মীর বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মান্দিয়াতা গ্রামে। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি মূলত পেশায় কৃষক। তবে ইট কেনাবেচার ছোটখাটো ব্যবসা আছে তাঁর। লেখাপড়া জানা নেই। কোনোমতে স্বাক্ষর করতে পারেন। তিনি বিএনপিতে তেমন সক্রিয় না হলেও তাঁর বাবা প্রয়াত মো. সামসুদ্দিন বিএনপির রাজনীতি করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে আছে।
নূর কাসেম জানান, বর্তমানে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার ৪১২ টাকা আছে। ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়ার বিষয়ে নূর কাসেম বলেন, ‘আমি ওনারে (কামরুল) ভালা পাই। উনি গরিবের লাগি ভালা। তাই মনের আবেগে দিছি। আমার অত টেকা নাই। এখন যদি মাইনসে কয়, এই টেকা দিত অইব, শ্রীপুর বাজারে আমার একটা ভিটা আছে, ইটা বিক্রি কইরা দিমু।
তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জে গিয়ে কেন চেক দিলেন জানতে চাইলে নূর কাসেম জানান, তিনি সমাবেশ দেখতে গিয়েছিলেন। মানুষ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি একটি মালা ও চেক তুলে দেন কামরুজ্জামানের হাতে। এখন বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন জানিয়ে নূর কাসেম বলেন, ‘আমি খারাপ মানুষ না। কাম করি খাই। আমার কোনো ধান্দা নাই। আমি শিক্ষিত না, রাজনীতি অততা বুঝিও না। মন থাকি ওনারে ভালা পাই। এর লাগি দিছি।’
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ওই কর্মী ভালোবেসে টাকা দিলেও তিনি নেবেন না। বিষয়টি তিনি নেতা–কর্মীদের ভালোবাসা হিসেবেই দেখছেন। কামরুজ্জামান বলেন, সমাবেশে হাজার হাজার লোক ছিলেন। কেউ ফুল, কেউ কাগজ, কেউ টাকার মালা দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কেউ ১০, কেউ ১০০, কেউ ৫০০ টাকার নোটের মালা দিয়েছেন। তেমনি নূর কাসেম হঠাৎ মঞ্চে এসে তাঁকে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছেন।
নূর কাসেমের বিষয়ে কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটি দলের প্রতি, আমার প্রতি তাঁর (নূর কাসেম) ভালোবাসা। আমি তাঁর ভালোবাসাটা গ্রহণ করব, চেকটি ফেরত দেব। আজ (রোববার) বিকেলে আমার একটি কর্মসূচি আছে, সেখানে ওই কর্মীর হাতে চেকটি তুলে দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল বিকেলে বিএনপির ৩১ দফার প্রচার ও ধানের শীষের পক্ষে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরুজ্জামান কামরুল। একপর্যায়ে কর্মীরা তাঁকে ফুল ও টাকার মালা গলায় দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তখন নূর কাসেম নামের এক কর্মী মঞ্চে উঠে কামরুজ্জামানের হাতে নির্বাচনে খরচের জন্য একটি চেক তুলে দেন। কামরুল সেটি হাতে নিয়ে দেখেন, ১০ লাখ টাকার চেক। পরে তিনি চেকটি সমাবেশে উপস্থিত দলের নেতা–কর্মীদের দেখান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ–১ আসনে কামরুজ্জামান ছাড়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা নজির, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা হামিদুল হক আফিন্দী, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুল মোতালেব খান।