Image description

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার প্রতিবাদ করায় যুবলীগের হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন মাদারীপুর রাজৈরের হোসেনপুর ইউনিয়ন জামায়াতের দুই নেতা।

অভিযোগ রয়েছে একই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলামিন খালাসির নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এসময় ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মহাসিন ফকির ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখ আহত হন। শুক্রবার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর পরিষদের ভিতরে এ ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামীপন্থীদের চাপ ও হামলা আতঙ্কে শনিবার বাড়ি ছাড়া হন জামায়াতের সেক্রেটারি মহাসিন ফকির। এদিকে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় ফুঁসে উঠেছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।

জামায়াত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় একটা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক বসে। এসময় একজনের নামকে অনুসরণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী-নেশাখোর বলে আখ্যায়িত করেন হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলামিন খালাসি। সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি মহাসিন। এ নিয়ে মহাসিনের উপর চড়াও হন আলামিন ও পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মানোয়ার। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা লোকজন নিয়ে মহাসিন ফকির ও আলী শেখকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোনা পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো মহাসিন ফকিরকে জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে রাজৈর উপজেলা জামায়াতে নেতাকর্মীরা। এরপরই বিভিন্ন চাপ ও হামলা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা মহাসিন।

এদিকে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।

ভুক্তভোগী হোসেনপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মহাসিন ফকির অভিযোগ করে জানান, জাতীয় বীর শহীদ আবু সাঈদকে যুবলীগ সভাপতি আলামিন সন্ত্রাসী ও নেশাখোর বলায় আমি প্রতিবাদ করেছি। এজন্য সে এবং রাঘদি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মানোয়ার ও তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করে হত্যাচেষ্টা চালায়। এসময় স্থানীয় কয়েকজন লোক আমাকে বাঁচিয়েছে। এ ঘটনায় বিচার দাবি করায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাধারণ সম্পাদক উল্টো আমার বিপক্ষে অভিযোগ তুলে আমাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যেকোনো সময় আবার আমার উপর হামলা হতে পারে। এজন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী শেখ জানান, মহাসিন ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমি মার খেয়েছি। তার কোনো দোষ ছিল না। মানোয়ার ওরা শহীদ আবু সাঈদ, বিএনপি ও জামায়াত তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এর প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু মহসিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন তার পদ নিয়ে ঝামেলা, পরে বিবেচনা করে দেখা হবে। আর আমার বিষয়টি পরে আলোচনা করে দেখবে বলেছেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শিক্ষার্থী আফরান জামি জানান, শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে যারা গালাগালি করেছে তাদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা জেলা পর্যায়ে কথা বলেছি। দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনের ফোন পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মহাসিনকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।