Image description
 

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের মালিকানাধীন ৭ লাখ পাউন্ডের লন্ডনের ফ্ল্যাটটি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের তহবিল ব্যবহার করে তিনি লন্ডনের এ সম্পত্তি কিনেছেন কিনা তা অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ইকোনমিক সেক্রেটারি টিউলিপ, তাঁর খালা শেখ হাসিনা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।

 

এরআগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস গত মাসে যখন জানতে পারেন, কেলেঙ্কারির বিষয়ে টিউলিপ জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছেন, তখন টিউলিপ সিদ্দিককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ট্রেজারি মন্ত্রী হিসেবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা এই এমপি লন্ডনে কয়েক সপ্তাহ ধরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। তাঁর খালার রাজনৈতিক দলের বিষয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। 

ছাত্র–জনতার অভুত্থ্যানে ক্ষমতাচুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এখন ভারতে আছেন। তাঁর শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের আক্রমণ, গ্রেপ্তার এবং গোপনে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে। দুদক রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের আত্মসাতের অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, হাসিনা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

তদন্তের সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে দুদক বলেছে, তারা অভিযোগ পেয়েছে, টিউিলিপ সিদ্দিক লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ডের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট পেয়েছেন, যা বাংলাদেশের ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অর্থের অপব্যবহার করে কেনা হয়েছে।

তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্যদের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি অর্জনের আগে মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার করা হয়েছিল।

দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের গোপন তদন্তে এই অভিযোগগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর, আমরা এটির একটি প্রকাশ্য তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি ও আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে জড়িত। আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে, তিনি বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্থ পাচার এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলেন।

তিনি বলেন, অবৈধ উপায়ে অর্থায়ন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তি লেনদেনের তদন্তে তাঁর নাম প্রকাশিত হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ৭ লাখ পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন, যেখানে পরিবারের অন্য সদস্যরা উত্তর লন্ডনে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাট এবং ১.৫৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি সম্পত্তি পেয়েছেন।

তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার অভিযানের মাধ্যমে এই লেনদেনগুলো সহজতর করা হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ এখন তাদের আর্থিক উৎস খতিয়ে দেখছে। অবশ্য লেবার পার্টি সূত্র জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনের ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছেন তাঁর খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী। ২০০৪ সালে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল ওই ফ্ল্যাট, তাই ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির সঙ্গে এটি যুক্ত করা যায় না।

টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের কোনো বিদেশি সম্পত্তি বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না। স্যার লরি আরও বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ বা বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত কোনো অস্বাভাবিক আর্থিক ব্যবস্থার কোনো ইঙ্গিত পাননি।

প্রতিবেদন বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত আসলে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে জড়িত একটি বৃহত্তর দুর্নীতির তদন্তের অংশ। রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের আর্থিক অনিয়মের কথা জানিয়েছে দুদক। তদন্তকারীরা শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন।

দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং তাঁর পরিবারকে প্রকল্প থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করতে সহায়তা করেছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এই বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি এবং তিনি দাবিগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।