জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আমার-আপনার কিন্তু কোনো স্থান নেই বলে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রবিবার বিকেলে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক বা দেশীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে অন্য কেউ সরকার গঠন করলে বিএনপির জন্য ভালো হবে? সুতরাং বিভ্রান্তিকর কাজ থেকে দূরে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, দিন শেষে আপনাদের সাধারণ ভোটারের কাছেই যেতে হবে। দিন শেষে ওই জনগণ। জনগণের সমর্থন যদি পেতেই হয়, কেন জনগণের কাছে ভালোভাবে যাব না। জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আমার-আপনার কিন্তু কোনো স্থান নেই। সামনের নির্বাচন কিন্তু সহজ নয়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের সাথে না থাকলে কি হয় তা জনগণ দেখিয়ে দিয়েছি। সুতরাং জনগণ আমাদের শক্তি।’ জনগণের সাথে থাকতে এবং জনগণের পাশে থাকতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৬ বছরে বিএনপির কোনো ভালো খবর ছিল না পত্রিকায়। প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীরা অত্যাচারিত হয়েছেন, নিগৃহীত হয়েছেন। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী জেলের ভেতরে হাতকড়া পরা অবস্থায় মারা গেছেন। দেশনেত্রী থেকে শুরু করে দলের প্রতিটি কর্মীকে সম্মান দেওয়া হবে, তাদের আত্মত্যাগ কখনোই ভুলে যাবে না মানুষ।
এসময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান দৃঢ়তার কণ্ঠে বলেন, এখনো সময় আছে…আসুন, আসুন, আসুন, আমরা জনগণের পাশে থাকি, জনগণের সাথে থাকি।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি এমন কিছু করে যা আপনাকে-আমাকে-দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমরা কে ছোট নেতা, কে গ্রামের নেতা, কে ইউনিয়নের নেতা, কে বড় নেতা, কে বিভাগীয় নেতা, কে কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টা এমন নয়। বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।
রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের একটি শপথ হোক- জনগণ যেন বুঝে জনগণ যেভাবে চায় আমরা সেইভাবেই তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পাশে আছি। এই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ১৭ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-কারাভোগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামের বিভিন্ন মিথ্যা-গায়েবি মামলা আছে। শুধু মাত্র জুলাই-আগস্ট মাসে যে আন্দোলনে বিএনপিরই প্রায় ৫‘শ মতো নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন, শত হাজারের মতো নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা যারা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন ওই (আওয়ামী লীগের আমলে মোটর শোডাউন) মোটর সাইকেলের বহরের যারা তারা কি অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে? অবশ্যই নয়। সারাদেশে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার যত কর্মী-সৈনিক আছেন আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ- দয়া করে ওই মোটর সাইকেল ওয়ালাদেরকে দলে ভিড় করতে দেবে না।
তারেক রহমান বলেন, নিজেকে যত বড় মনে করি না কেন, জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নাম বলব না কিছু কিছু রাজনৈতিক শক্তি, ছোট-বড় হোক না কেন, তারা বিভিন্নভাবে আমাদের বিপক্ষে এই মোটর সাইকেল ওয়ালাদের কিছু কাজকর্মের কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করে কিছু কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে এই ব্যাপারে সতর্ক ও শক্ত হতে হবে।
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।