Image description

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি। 

এদিকে বিকেলে বিএনপির সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। 

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে অপতত্ত্ব ছড়ানোর, একটা অপব্যাখ্যা ছড়ানোর একটা বিশাল টেন্ডেন্সি দেখি অনেকের মধ্যে। আজকে একটা দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে আমাকে কোনো একটা বিষয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি এখানেই এই সুযোগটা নিয়ে এটা একটু বলে দিই।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘গতকালকে সংগঠিত জাতীয় সংসদের বিশৃঙ্খলা যেগুলো হয়েছে, সেটার সাথে জড়িয়ে আমি বুঝলাম না জুলাই যোদ্ধারা কেন নিজেরা সেই বিশৃঙ্খলার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছে। আমি স্পষ্টতই বলেছি, সকালে আমার একটা অনুষ্ঠানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গেলে বলেছি, আমি বিশ্বাস করি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন এবং কোনো ব্যক্তি এ রকম বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত ছিল না, থাকতে পারে না।’

‘জুলাই যোদ্ধা’দের একটি সংগঠন থেকে গতকাল সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার ভিত্তিতে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পাঁচ নম্বর দফায় পরিবর্তন আনা হয়।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, তারা মনে করেছিলেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য গণহত্যা চালিয়েছে, ছাত্রজনতা কাতারে কাতারে শহীদ হয়েছে, কিন্তু সেই গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে সেই ফ্যাসিস্ট শক্তি বা তাদের দোসরদের কয়েকজন জনগণের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। তারা মনে করেছেন, সেইখানে তাদের কোনো অভিযুক্ত করা হবে কি না। আমি বলেছি, যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যারা গণ–অভ্যুত্থানের নিরস্ত্র ছাত্রজনতাকে হানাদার বাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের গণহত্যা করেছে, গণ–অভ্যুত্থানের যুদ্ধের ময়দানে তাদের বিচার জনগণ করেছে। সুতরাং তাদের আর বিচার হবে না। তাঁদের আশ্বস্ত করেছি এবং সেই দফাটা যাতে সংশোধন করে যে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে, সেটা বলা হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন, তাদের বীর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিধান করা হয় এবং মাসিক ভাতাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা হয়, সেই বিধান লেখার জন্য আমি নিজে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রফেসর আলী রীয়াজ সাহেবের সাথে কথা বলে সেটা আমরা সংশোধন করেছি। এখানে তাদের সন্তুষ্টি হওয়ার কথা। সন্তুষ্ট হয়ে তারা বিদায় নিয়েছেন।’

 

এরপরও বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমি বলেছি তাদের কথা, যে বাংলাদেশের পক্ষের কোনো শক্তি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কোনো শক্তি, কোনো সংগঠন, কোনো ব্যক্তি এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। এবং এটাও বলেছি যে যাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ হয়নি বা যেতে পারেননি, তাঁদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, কমিশন ঘোষণা করেছে, যেকোনো সময় তাঁরা সেটা স্বাক্ষর করতে পারবেন। হয়তো তাঁদের সেই দাবিদাওয়াগুলো কালকের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু বিভিন্নভাবে ইনিয়ে–বিনিয়ে আজকে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পরোক্ষভাবে ভোগ করছেন, তারা চায় না কোনো নির্বাচন হোক। এর মধ্যে আরও দুই একটি রাজনৈতিক শক্তি আছে, তারাও বিভিন্নভাবে পরোক্ষভাবে বেনিফিশিয়ারি এই বর্তমান সরকারের। সে জন্য তারাও চায় যে বিএনপি যেন ক্ষমতায় না আসে। এবং অনেকে মনে করে যে বিলম্বিত হলে হয়তো তারা ক্ষমতায় আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন এবং তারা একটা রাজনৈতিক দল করেছেন, হয়তো বিভিন্ন কারণে এখনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা হয়নি বলে বিভিন্ন রকমের কথা বলে থাকেন। আমি তাদের উৎসাহিত করি যে রাজনীতিতে আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, শিক্ষা নেওয়ার জন্য। কারণ, আমরা মনে করি, আমাদের এই প্রজন্মকে এগিয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই আগামী দিনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেবেন। অনেক বেশি আশা করি তাদেরকে নিয়ে।’

এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, আমাদের আহ্বান থাকবে, তিনি (সালাহউদ্দিন) তার এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করবেন এবং সেই আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারদের কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং তাদের সঙ্গে বসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্পটা শুনবেন, ইতিহাসটা শুনবেন।’