Image description

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর কাছে পরাজিত হয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। ২৩ পদের মধ্যে ২০টিতে শিবির সমর্থিত প্যানেল জয়ী হলেও মাত্র একটি পদে জিতেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের নির্বাচনেও ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য দেখা গেছে। সবগুলো হলের ভিপি, এজিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির মনোনীত প্রার্থীরা। আর জিএস নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে।

গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

কেন্দ্রীয় সংসদে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীর পেয়েছেন তিন হাজার ৩৯৭ ভোট।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার ১১ হাজার ৪৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত প্যানেলের ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭২৭ ভোট।

ছাত্ররাজনীতিতে দীর্ঘদিন পর এতবড় ব্যবধানে পরাজয় ছাত্রদলের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, সংগঠনের ভেতরে কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকট ছিল ছাত্রদলের বড় দুর্বলতা। শিবির দীর্ঘদিন ধরে রাবিতে সংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে ছিল। ফলে মাঠপর্যায়ের সংগঠন ও ভোটারদের কাছে তাদের প্রভাব দৃঢ় ছিল। এছাড়াও ছাত্রদল নির্বাচনি প্রস্তুতির দিক থেকে অব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত দুর্বলতা প্রদর্শন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শিবিরের সংগঠিত প্রচার ও শান্তিপূর্ণ ইমেজে আস্থা রেখেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্রদলের পরাজয় মূলত সংগঠনিক ভাঙনের ফল। অন্যদিকে ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলপর্যায়ে কাজ করছিল। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে।

একই মত প্রকাশ করেছেন রাবির এক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের পালস বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাইপরবর্তী সময়ে পুরোনো ধাঁচের রাজনীতি ছাত্রদলকে একঘরে করে তুলেছে। ছাত্রদলের উচিত রাজনীতি শিক্ষার্থীবান্ধব ও গুণগতমান নিশ্চিত করা।

শিবির তাদের সাংগঠনিক ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছে, ছাত্রদল তা পারেনি। এছাড়া নির্বাচনি প্রচারে শিবিরের শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।

রাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের এই জয় এবং ছাত্রদলের পরাজয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ফলাফল ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সমীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।