
নির্বাচনি হাওয়ায় উত্তপ্ত সিলেট বিএনপি। আগামী নির্বাচনে সিলেটের ৬টি আসনসহ বিভাগের ১৯টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেন্দ্রে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠক নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়, চাপে রয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সিলেট বিভাগে নির্ধারিত হচ্ছে ‘কে থাকবেন টিকিটের দৌড়ে, আর কারা বাদ পড়বেন।’ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ করার কথা। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের অবস্থা বেহাল থাকায় ঢাকামুখী নেতাদের প্রায় সবাই নিয়েছেন বিমানের টিকিট।
রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের সব সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকে প্রতিটি আসনে প্রার্থীর সাংগঠনিক অবস্থা, ভোটার সংযোগ, মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা পর্যালোচনা করা হবে। মাঠে সক্রিয়তাসহ বিভাগের ১৯টি আসনের শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী এখন ঢাকামুখী। গুটিকয়েক ছাড়া বাকি সবাই যাবেন বিমানে। সড়ক পথে যারা যাবেন তারা আজ (শুক্রবার) রওনা দেবেন।
দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র এবং এবারের মনোনয়ন প্রত্যাশী জি কে গৌছের নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তার ঘনিষ্ঠরা জানান, তলবের খবর পেয়েই তিনি ঢাকা চলে গেছেন এবং সেখানেই অবস্থান করছেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। সন্ধ্যায় তিনি এক সমাবেশে ছিলেন। ফোন ধরে বললেন, ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের দুইবারের নির্বাচিত বিএনপি নেতা কলিম উদ্দিন মিলনও গতকাল ঢাকায় ছিলেন। ফোন ধরে জানালেন তিনি ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরছেন। আগামী রোববারের সাক্ষাৎকারের জন্য আবার যাবেন। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এবার বেশি হলেও দলই যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে, এবারের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা নেতারা, যুবনেতা, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডাটাবেজ ও অনলাইন স্ক্রুটিনির মাধ্যমে প্রার্থীদের অতীত কার্যক্রম, ভোটার সংযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবস্থান, সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং জনসম্পৃক্ততা যাচাই করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দল একটি স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করতে চাইছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভাগীয় অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, প্রতিটি আসনে কেবল একজন প্রার্থীই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন এবং সব প্রার্থীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও সক্রিয় থাকতে হবে।
সূত্র অনুযায়ী, সিলেট-১ থেকে সিলেট-৬, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিমানযোগে ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। বৈঠকে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্ভাব্য মনোনয়ন, নির্বাচনী কৌশল ও দলীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করবেন। নেতারা জানিয়েছেন, প্রার্থী বাছাই শেষে প্রতিটি আসনে ধানের শীষের পক্ষে সব নেতা একযোগে কাজ করবেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থিতা রোধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বৈঠক ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সিলেট বিভাগের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে, যা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। রোববার বিকাল ৩টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সিলেট বিভাগের প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের সাংগঠনিক অবস্থা, জনসম্পৃক্ততা ও মাঠপর্যায়ে অবস্থান পর্যালোচনা করা হবে। এরপর কেন্দ্রীয় টিম প্রাথমিক খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করবে।
দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুধু সুনামগঞ্জের ৫ জেলাতেই সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা ২১ জন। তবে মাঠে তৎপর না থাকলেও ওই জেলার প্রার্থী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। এ হিসাবে বিভাগের চার জেলায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা ১শ ছাড়াবে।