
গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের সময় ফাঁস হওয়া শেখ হাসিনার কথিত ফোনালাপগুলো নিয়ে নতুন করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। আলোচিত এসব ফোনালাপ নিয়ে এবার বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম।
বুধবার আদালতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার ওই ফোনালাপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে। তার দাবি, এনটিএমসির রেকর্ডকৃত এসব অডিও ‘অফিশিয়াল ডকুমেন্ট’ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা যাচাই-বাছাইয়ের পর সত্য বলে নিশ্চিত করেছে সিআইডি।
প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, ফরেনসিক টেস্টে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর *আসল ও অপরিবর্তিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। সিআইডি ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসি-র বিশেষজ্ঞ দল রেকর্ডগুলো বিশ্লেষণ করে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।
তাজুল ইসলামের ভাষায়,“সুপিরিয়র স্ট্যাটাস ব্যবহার করে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেথাল ওয়েপন, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দেন। ড্রোনের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে আকাশ থেকে গুলি চালানোর নির্দেশও ছিল ওই আলাপগুলোতে।”
প্রসিকিউটর দাবি করেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত ও দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়, এবং সেই হেলিকপ্টার থেকেই গুলি চালানো হয় নিরস্ত্র জনতার ওপর।
তদন্তে আরও জানা গেছে, এনটিএমসির সার্ভিল্যান্স টিম শুধু শেখ হাসিনার নয়,যাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তাদেরও নজরদারিতে রেখেছিল। আলোচিত ফোনালাপগুলোতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রী ও জাস সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম মাসুদ কামাল।
চিফ প্রসিকিউটরের দাবি, “সিআইডি-র রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়েছে, শেখ হাসিনা, ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু ও মাসুদ কামালের কণ্ঠস্বর আসল এবং কোনোভাবেই কৃত্রিমভাবে তৈরি নয়।”
এনটিএমসির রেকর্ড থেকে উদ্ধার হওয়া এসব অডিও আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাজুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রীয় সংস্থার তথ্য হওয়ায় এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে—কে বা কারা এসব গোপন ফোনালাপ ফাঁস করল, এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থা হয়েও কীভাবে এনটিএমসির তথ্য বাইরে চলে এলো—সে প্রশ্নে এখন সরব পুরো দেশ।