Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও প্রশাসনিক পদায়নে পক্ষপাতমূলক আচরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করছে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এই সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরকারের কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর, প্রশাসনিক রদবদল ও নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করার পাশাপাশি তাঁদের উদ্বেগের কথাও জানাবেন।

ওই সূত্রগুলো জানায়, সরকারের কিছু উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈঠকে একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে—যাঁরা নিরপেক্ষ থাকার কথা, তাঁরা এমন কিছু আচরণ করছেন, যাতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে কয়েকজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে যেসব রদবদল বা নতুন পদায়ন হয়েছে, সেখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিতেও ওই দলের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কও তত বাড়ছে।

 

সভায় বিএনপির নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকারের এখনই উচিত নিজেদের চরিত্র এমনভাবে দাঁড় করানো, যাতে জনগণ এবং সব দল আশ্বস্ত হয়—এ সরকার সত্যিকার অর্থেই তত্ত্বাবধায়ক ধাঁচের নিরপেক্ষ সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না, এই সরকার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলুক। তবে কিছু উপদেষ্টার আচরণে মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের উচিত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন করা।’

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির পক্ষে সনদে সই করবেন।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সভায় দলীয় গণসংযোগ ও প্রচারণা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে দলের বার্তা পৌঁছাতে মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, তার মোকাবিলায় বিকল্প বয়ান বা পাল্টা কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেন একাধিক সদস্য।

বৈঠকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে লম্বা আলোচনা না হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই দায়িত্ব ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ের মতামত বিশ্লেষণ করে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।