
বেসরকারি সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিংয়ের ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে, দ্বিতীয় পর্ব - দ্বিতীয় খণ্ড’-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী কম শিক্ষাগত যোগ্যতার ভোটারদের মধ্যে বেশি পছন্দে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি এবং উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার ভোটারদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে জামায়াত। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের নমুনা ভোটারদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জামায়াত। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানের রয়েছে বিএনপি।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বিডিবিএল ভবনে অনুষ্ঠিত ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, শিক্ষা নেই বা প্রি-স্কুল নমুনার ভোটারদের বেশি পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিএনপি, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জামায়াত, তৃতীয় অবস্থানে আওয়ামীলীগ। জরিপে শিক্ষা নেই বা প্রি-স্কুল নমুনা ভোটাররা ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ বিএনপিকে, ২৭ দশমিক ২ শতাংশ জামায়াতকে, ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ আওয়ামী লীগকে (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এগিয়ে রেখেছেন। কিছু পড়াশোনা করেছে কিন্তু প্রাইমারি শেষ করতে পারেনি এমন ভোটাররা ৪৫ দশমিক ২ শতাংশ বিএনপিকে, ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ জামায়াতকে, ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগকে এবং ৫ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।
প্রাথমিক শেষ করেছেন কিন্তু মাধ্যমিক শেষ করতে পারেনি এমন ভোটাররা ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিএনপিকে, ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ জামায়াতকে, ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ আওয়ামী লীগকে এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ নমুনা ভোটারের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বিএনপি, ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার জামায়াতকে, ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ আওয়ামী লীগকে, ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এনসিপিকে এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ভোটারের ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ বিএনপিকে, ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার জামায়াতকে, ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ আওয়ামী লীগকে, ৭ দশমিক ৯ শতাংশ এনসিপিকে এবং ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে রেখেছেন। ভোকেশনাল শিক্ষিত পর্যায়ের ভোটারদের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ জামায়াতকে, ২৯ দশমিক শূন্য শতাংশ বিএনপিকে, ১৬ দশমিক ১ শতাংশ এনসিপিক এবং ৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।
স্নাতক পর্যায়ের নমুনা ভোটার তালিকার ৩২ দশমিক ২ শতাংশ বিএনপিকে, ৩১ দশমিক তিন শতাংশ জামায়াতকে, ১৭ দশমিক ২ শতাংশ আওয়ামী লীগকে, ১১ দশমিক ৪ শতাংশ এনসিপিকে এবং ৭ দশমিক ৮ শতাংশ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে রেখেছেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নমুনা ভোটারদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জামায়াত। ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ জামায়াতকে, ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ বিএনপিকে, ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ আওয়ামী লীগকে, ১৫ দশমিক শূন্য শতাংশ এনসিপিকে এবং ৭ দশমিক ৮ শতাংশে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।
পিপলস ইলেকশন পালস জরিপ ইনোভিশন জানায়, দ্বিতীয় পর্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় পর্বের দুটি খণ্ড রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম খণ্ডে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন- নির্বাচনের সময়কাল, নির্বাচনী পরিবেশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যসম্পাদন সম্পর্কিত বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বটি প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ। প্রথম পর্বের ফলাফল প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ।
দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় খণ্ডে পালস পয়েন্টস, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক, ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি প্রত্যাশা, দলীয় পছন্দ, দলের অনুমোদন ও ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপটি ১০ হাজার ৪১৩ ভোটার-বয়সী জনগণের মধ্যে পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে খানা/পরিবারের রয়েছে ৯ হাজার ৩৯৮ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ১৫ জন। জরিপের সময়কাল ছিল ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর। ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলায় এ জরিপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
বিভাগ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ দশমিক শূন্য শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫০ দশমিক শূন্য শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১১ দশমিক ২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১১ দশমিক শূন্য শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এলাকা অনুযায়ী ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রামীণ এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ শহুরে নমুনা ভোটার জরিপে অংশ নেন। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ, ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ মহিলা এবং শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ রয়েছে। বয়স অনুযায়ী জেন জি (১৮-২৮ বছর) ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ, মিলেনিয়ালস (২৯-৪৪ বছর) ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ, জেন এক্স (৪৫-৬০ বছর) ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৬০+ বছরের ১ দশমিক ৩ শতাংশ নমুনা ভোটার অংশ নেন।
ফাহিম মাশরুর সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে ড. আসিফ শাহান, এনসিপি নেতা জ্যোতি রহমান জাকারিয়া, জামায়াত নেতা ড. নকীবুর রহমান, বাংলা আউটলুকের ড. অনন্যা রাইহান মোকতাদির, বেসরকারি সংস্থা ব্রেইন’র ড. শফিকুর রহমান অংশ নেন। আলোচনায় বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশন কনসালটিংয়ের রুবাইয়াত সারওয়ার জরিপের ওপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। জরিপ পরিচালনায় সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি সংস্থা ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্ম।