
আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত দুটি যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিসাইল ও যুদ্ধজাহাজের মডেল তৈরি করেছে। তার এমন সৃষ্টিকর্মে অভিভূত এলাকাবাসী।
সিফাত একজন বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে সেই প্রতিভা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করলে সে তার সৃষ্টিশীল কাজে আরও এগিয়ে নিতে পারবে বলে আশা সিফাতের।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওগা গ্রামের মো. বশির প্যাদার ছেলে সওকত ইসলাম সিফাত ছোট থেকেই নতুন নতুন আবিষ্কার কর্মে উৎসাহী ছিল। ২০২২ সালে একটি হাফিজি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়। এক বছর হেফজ শেষে সে ২০২৩ সালে চাওড়া পাতাকাটা মেহেরআলী দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ২০২৫ সালে গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।
লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করে সওকত ইসলাম সিফাত। নতুন নতুন আবিষ্কারই যেন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে সে যুদ্ধবিমান তৈরি উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ তিন মাস প্রচেষ্টার পরে সে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেলের যুদ্ধবিমান তৈরি করে। ওই বিমান সে আকাশে উড়িয়ে এলাকার মানুষের কাছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী উপাধি পায়।
বাবা বশির প্যাদা ও মা চম্পা আক্তারের অনুপ্রেরণা এবং এলাকার মানুষের উৎসাহে সে আরও নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠে। এরপর সে দুই মাস চেষ্টা করে আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধবিমান তৈরি করে। এরপর সে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিশাইল ও যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে। সব আবিষ্কারেই সে সফল হয়েছে।
সওকত ইসলাম সিফাতের মা চম্পা আক্তার জানান, ছেলে সিফাত লেখাপড়ার চেয়ে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। সারাক্ষণ আবিষ্কারের নেশায় গবেষণাগারে পড়ে থাকে। ইতোমধ্যে সে দুইটি যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও যুদ্ধজাহাজ বানিয়েছে। তার সব আবিষ্কারই সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। তার তৈরি বিমান আকাশে উড়ছে, যুদ্ধজাহাজ পানিতে চলছে, রাডার ও মিসাইল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে; কিন্তু বাদসেধেছে তার পরিবারের আর্থিক দৈন্যদশা। টিফিনের টাকা জমা করে এবং বাবা-মা ও প্রতিবেশীদের দেওয়া অর্থ দিয়ে সে এগুলো তৈরি করেছে। এগুলো তৈরি করতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে সে নতুন আবিষ্কারের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে অনুদান পেলে সে নতুন নতুন আবিষ্কারে আরও এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
সোমবার দুপুরে ক্ষুদে বিজ্ঞানী সওকত ইসলাম সিফাতের এমন সৃষ্টিকর্ম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- সে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমে আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধবিমান আকাশে উড়িয়ে দেখায়। এ যুদ্ধ বিমান তৈরিতে সে রিমোট, রিসিভার, বিএলডিসি মর্টার, সার্ভো মর্টার ও ব্যাটারিসহ নানা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছে।
জসিম প্যাদা ও জালাল মৃধা বলেন, ছোটবেলা থেকেই সিফাত নানান কিছু আবিষ্কার করে আসছে। ওর আবিষ্কার দেখে আমরাও অভিভূত। ওকে নতুন নতুন আবিষ্কারে উৎসাহী করি।
তারা আরও বলেন, ওকে এলাকার সবাই ক্ষুদে বিজ্ঞানী বলে ডাকে।
সওকত ইসলাম সিফাত বলে- মা ও বাবার অনুপ্রেরণায় টিফিনের টাকা জমিয়ে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেল যুদ্ধবিমান, আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেল যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও মিসাইল তৈরি করেছি।
সে আরও বলে- আরও অনেক কিছু তৈরির পরিকল্পনা আছে। অর্থের অভাবে আবিষ্কার করতে পারছি না। আমি বৈজ্ঞানিক হয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাজ করতে চাই।
কৃষক বাবা মো. বশির প্যাদা বলেন, ছেলের প্রতিভা দেখে অর্থের দিকে তাকাই না। অনেক কষ্ট হলেও সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে ওর সৃষ্টিকর্ম সচল রাখতে চেষ্টা করি; কিন্তু এখন আর পারছি না।
গাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, মেধাবী ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত ক্লাশের বাহিরে বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা করে। সে ইতোমধ্যে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও রাডার তৈরি করেছে। তাকে প্রয়োজন মতো বিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সহায়তা পেলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তার এমন উদ্ভাবনী সৃষ্টিকর্মের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।