
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মারধর করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৬) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ছাত্রদল নেতা শাওন ও আটককৃত ইদ্রিসসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শেখ নাঈম আহমেদ।
তবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটা বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন শাওনও আটক হয়েছেন এবং পুলিশ হেফাজতে আছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কেউ কথা বলছেন না।
জানা গেছে, মামলার বাদী নাঈম আহমেদ রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত ট্রিপজায়ান নামক একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তিনি শুক্রবার গুলশান এলাকায় ব্যাবসায়িক কাজের জন্য গিয়ে চাঁদা দাবি, অপহরণ ও মারধরের শিকার হন বলে দাবি তার।
এদিকে, মামলার এজাহারে নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘আমি ০৯ অক্টোবর দুপুর অনুমান ১টার দিকে ব্যাবসায়িক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য গুলশান-১ এ আসি। পরবর্তীতে আমি আমার মিটিং শেষ করে গুলশান-১ গোলচত্তরের পশ্চিম পাশে ৫১ দক্ষিণ অ্যাভিনিউয়ের নিচ তলায় বিসমিল্লাহ হানিফ বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খাওয়ার উদ্দেশ্যে যাই।’
‘আমি সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আসামি নাসির উদ্দিন শাওন তার মোবাইল আমাকে ফোন করে দুবাইয়ের বিমান টিকিট ক্রয় করবে মর্মে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি শাওনকে আমার অবস্থান জানালে ৫টা ৫৫ মিনিটে মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৬), মোহাম্মদ হেলাল (২৬), নাসির উদ্দিন শাওন (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন আমাকে ঘিরে ধরে জোরপূর্বক খলিফা’স রেস্টুরেন্টে অপহরণ করে নিয়ে যায়।’
নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘তারা আমার ফোন, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং আমার কাছে নগদ ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ছবি তারা সংগ্রহ করে। তখন আমার ভাইয়ের ছেলে নাহিদুল ইসলাম খলিফা’স রেস্টুরেন্টে আসলে তারা আমার ল্যাপটপটি আমার ভাতিজা নাহিদুল ইসলামকে দিয়ে দেয়।’
‘আমি তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ধ্যা ৭টায় আমাকে গুলশান-০১ লেকপাড়ে নিয়ে যায় এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তাদের দাবীকৃত নগদ ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রাত ১০টার মধ্যে দেওয়ার জন্য বলে, অন্যথায় তারা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।’
মামলার এজাহারে তিনি আরও লেখেন, ‘টাকা দিতে ব্যর্থ হলে রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা আমাকে তাদের ব্যবহৃত মটরসাইকেলে উঠিয়ে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার পার্শ্ববর্তী হয়ে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় আমার ডাক চিৎকার শুনে যৌথ বাহিনীর চেকপোষ্টে আমাকে বহনকৃত মটরসাইকেলটিকে থামালে শাওন আমাকেসহ ০১ নং আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে রেখে অন্য আসামিদের নিয়ে পালিয়ে যায়। যৌথ বাহিনী ইদ্রিসকে (১ নং আসামি) ধরে তাদের হেফাজতে নেয় ও আমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে আমাকে ফেরত দেয়। যৌথ বাহিনী তারা তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আমাকে ও ইদ্রিসকে গুলশান থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী শেখ নাঈম আহমেদকে কল দিলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখন কিছু বলতে পারব না। পরে আবার একাধিকবার কল দিলে তিনি আর রেসপন্স করেননি।
এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানতে ছাত্রদল ঢাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওনকে মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
মামলার অগ্রগতি ও সার্বিক বিষয়ে জানতে গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), ওসি (তদন্ত), পরিদর্শক (অপারেশন) এবং ডিসিকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
তবে থানাটির দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জানান, তিনি রাতের শিফটে ডিউটিতে ছিলেন না, সকালে তার ডিউটি শুরু হয়েছে। মামলাটি সম্পর্কে এখনো তিনি কোনো নথি পাননি।
পরে ১১টার দিকে কল দিলে তিনি জানান, মামলা রুজু হয়েছে। আর অন্য কোনো তথ্যের ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারবেন না, তাদের সিনিয়র অফিসাররা বলতে পারবেন। তাছাড়া তিনি তার নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান, যার কারণে তার নাম উল্লেখ করা যায়নি।