Image description

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গাজীপুর-৬ (বৃহত্তর টঙ্গী) আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বনামধন্য একাডেমিশিয়ান ও গাজীপুরের কৃতি সন্তান ড. হাফিজুর রহমান। প্রবাসফেরত এই শিক্ষাবিদের প্রার্থিতা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে তার প্রার্থিতা নতুন এক আশার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গাজীপুর জেলার কালনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. হাফিজুর রহমান। পড়ালেখার হাতেখড়ি কালনী ইসলামিয়া ফাজিল (বিএ) মাদরাসায়, যেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে উপজেলা বৃত্তি এবং অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরবর্তীতে টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করার পাশাপাশি তা’মীরুল মিল্লাত থেকেই ফাজিল ও কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপে আঙ্কারার গাজী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্কে যান এবং ২০২০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে তিনি তুরস্কের তোকাত গাজি ওসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন।

পেশায় একাডেমিশিয়ান হলেও লেখালেখিতেও তিনি সমানভাবে সক্রিয়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে নিয়ে বাংলায় লেখা প্রথম বই “এরদোয়ান: দ্য চেঞ্জ মেকার” ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া “আমার দেখা তুরস্ক” ও “ইসলামী রাজনীতি তত্ত্বে রাষ্ট্র ধারণা” বই দুটি পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। তার লেখা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বহু আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা। তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসা ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তুরস্কে গিয়ে বাংলাদেশ ফোরাম অব তুর্কি গঠন করেন এবং বর্তমানে এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক বিভাগসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্বেও যুক্ত রয়েছেন।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টঙ্গী ও ঢাকার রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি এবং ২০১৪ সালে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কারাবরণ করেন। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে প্রবাসীদের সংগঠিতকরণ, অনলাইন এক্টিভিজম ও কূটনৈতিক তৎপরতায় তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। গাজীপুরে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রেনেসাঁ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং গাজীপুর স্টুডেন্টস ফোরাম গঠনে নেতৃত্ব দেন। তুরস্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় বাংলাদেশ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্থা এবং বাংলাদেশ অনলাইন স্কুল তুর্কিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ইস্তানবুলে সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (CPSR) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নীতি ও সমাজবিষয়ক গবেষণায় কাজ করছে।

তিনি তুরস্কের অন্যতম সিভিল সোসাইটি সংগঠন নিউ ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে ৫০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেছেন। ২০২৩ সালের ভয়াবহ তুরস্ক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন ও ত্রাণ বিতরণে নেতৃত্ব দেন। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে একাডেমিক ও সামাজিক সেমিনারে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজীপুর-৬ আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে এমন একজন শিক্ষিত, সৎ ও একাডেমিক প্রার্থী নতুন ভোটধারার সূচনা করতে পারে। তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষিত সমাজের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। শিক্ষক, লেখক, গবেষক ও সমাজকর্মী—এই চার গুণে সমৃদ্ধ ড. হাফিজুর রহমানকে ঘিরে টঙ্গীজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনার ঝড়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী তরুণ ও নৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ইতিবাচক রাজনীতির নতুন ধারা গড়তে চায়, আর ড. হাফিজুর রহমান সেই ধারারই উজ্জ্বল প্রতীক। গাজীপুরের শিক্ষিত ভোটারদের একাংশের আশা—এই প্রবাসী অধ্যাপক শুধু রাজনীতির নয়, বরং মূল্যবোধনির্ভর নেতৃত্বের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবেন।