
চট্টগ্রামের রাউজানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আব্দুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান তিনি। যদিও গতকাল দলটির স্থানীয় নেতারা হাকিমকে বিএনপি সমর্থক দাবি করে তার হত্যার প্রতিবাদে রাউজানে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে।
আজ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতিকারীদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনায় আব্দুল হাকিম নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন। এই সহিংস ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির একটি বড় ধরনের নজির। এই রক্তাক্ত ঘটনা ওই এলাকার জনমনে উদ্বেগ ও ভীতির সঞ্চার করেছে। বর্তমানে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চারিদিকে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজমান, যা এই সরকারের কাছ থেকে জনগণ প্রত্যাশা করে না।
তিনি বলেন, সহিংস ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে সমাজবিরোধী কিছু দুর্বৃত্ত-চক্রের পরিকল্পিত হিংস্র কর্মকাণ্ড। এর সঙ্গে রাজনীতি বা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। নিহত ব্যক্তি ও দুস্কৃতিকারীদের কেউই বিএনপির নেতাকর্মী নন। কয়েকটি গণমাধ্যমে নিহত ব্যক্তিকে বিএনপির কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।
জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণেই দুষ্কৃতিকারীরা অপকর্মে মেতেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সমাজের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। সেই কারণে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও কোনো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। জনগণ এই অরাজক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান দেখতে চায়।
বিবৃতিতে ঘটনাটির জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এলাকায় আধিপত্যকামী দুস্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করা হলেও গতকাল হত্যাকাণ্ডটি ঘটার পর রাউজানে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা। এলাকায় তিনি তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া কেন্দ্র থেকে হাকিম বিএনপির কেউ নন বলে দাবি করা হলেও রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহম্মদ জানিয়েছেন, নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির সমর্থক ও একজন ব্যবসায়ী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় জানান, নিহত হাকিম রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচ খাইন এলাকার মৃত আলী মদন চৌধুরীর ছেলে। তিনি বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে দলীয় কোনো পদ ছিল না। হাকিম ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাউজানের বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে হাকিম তার গ্রামের খামারবাড়ি থেকে অপর একজনসহ তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কাপ্তাই সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি চালকের পাশের আসনে বসা ছিলেন। মদুনাঘাট এলাকায় পৌঁছালে একদল মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রধারী তার গাড়ির পিছু নেয়। এরপর পানি শোধনাগার এলাকায় পৌঁছালে তারা আবদুল হাকিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। এ সময় দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করে নগরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
একটি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। ২০২২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভূপেষ বড়ুয়ার হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুনরায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে সক্রিয় হন। কর্ণফুলী এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।