
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এক এগারোর সরকার তো একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিবিসিতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারের তিনি এ কথা বলেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হয় এদিন।
এক এগারোর সরকার নিয়ে মূল্যায়ন কী? জানতে চাওয়া হলে বিবিসিকে তারেক রহমান বলেন, ভাই আমরা তো সামনে যেতে চাই। আপনি পেছনে কেন যাচ্ছেন? দেশকে সামনে নিতে হবে।
এরপর বিবিসির প্রশ্ন ছিল, মানে পেছন থেকেই তো শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হয়। তো পেছনের একটা বিষয়, সেটা হচ্ছে, এক এগারোর সরকার বা সেনা-সমর্থিত সরকারের সেই সময়টা নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনা আছে। সে সময়টাকে ঘিরে আপনার মূল্যায়নটা কী?
তারেক রহমান বলেন, এক বাক্যে বা সংক্ষেপে যদি বলতে হয়, এক এগারোর সরকার তো একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সরকার ছিল। আমরা দেখেছি সেই সরকার আসলে কিভাবে দেশের যতটুকু যেমনই হোক বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যতটুকুই রাজনীতি গড়ে উঠেছিল, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল ভুল-ত্রুটি সবকিছুর ভেতর দিয়েই।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখেছি যে কিভাবে তারা সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে একটি অন্ধকার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে দেখেছি, খুব সম্ভবত তাদেরই ভিন্ন আরেকটি রূপ; অন্যভাবে দেখেছি আমরা ‘ইন দি নেম অফ ডেমোক্রেসি’।
সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি তাদের রাজনীতিতে কী কী পরিবর্তন এনেছে কিংবা দলের অভ্যন্তরে কতটা সংস্কার হয়েছে সেটি নিয়েও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তারেক রহমান।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পর্ক কেমন- এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তো রাজনৈতিক, কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। প্রথম থেকেই বলেছি, আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। কিছু সংস্কারের বিষয় আছে। একই সাথে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের বিষয়ও আছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের মূল দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন।’
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা আশা রাখি, তারা কাজটি সুন্দরভাবে করবেন। আর তারা কতটা ভালোভাবে করতে পারবেন, সেটার ওপরই সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা নির্ভর করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগের মন্তব্যের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘যখন আমি সে কথা বলেছিলাম, তখন পর্যন্ত তারা নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়নি। সে কারণে শুধু আমার নয়, প্রায় সবার মধ্যেই সন্দেহ ছিল। পরে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। পাশপাশি নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় সন্দেহ ধীরে ধীরে কেটে গেছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমি মনে করি, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, তাদের বক্তব্য ও কাজে সেই দৃঢ়তা বজায় রাখবেন, ততই এই সন্দেহ দূর হবে।’
লন্ডন ড. ইউনূসের সাথে তার বৈঠক নিয়েও সাক্ষাৎকারে কথা বলেন তারেক রহমান।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ তারেক রহমান প্রায় দু’দশক ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে তিনি চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়েন এবং এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন- এই ইস্যুতে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতার জের ধরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।