
মাকে কাঠগড়ায় দেখে কাঁদলেন নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী দম্পতির মেয়ে নাজা। আদালতের দরজায় মেয়েকে দাঁড়ানো দেখে কান্না করেন বুবলীও।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের আদালতের এ দৃশ্য দেখা যায়।
তেজগাঁও থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে বুবলীকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর বুবলীর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন খান। আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির দিন মঙ্গলবার ধার্য করেন। এ দিন শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বুবলীকে দেখতে মেয়ে-বোনসহ স্বজনরা আদালতে আসেন।
২টা ৫২ মিনিটের দিকে বুবলীসহ ১৭ জনকে আদালতের পঞ্চম তলার ১০ নম্বর কোর্টে তোলা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। পঞ্চম তলায় পুলিশের বেষ্টনীর মাঝে বুবলীকে দেখার পর ‘মা’ বলে ডাক দেন নাজা। হেলমেট পরিহিত মাও মেয়ের দিকে তাকান। তবে পুলিশ সদস্যরা তাকে থামতে দেয়নি। কাঠগড়ায় নেওয়ার পর তার মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলা হয়। বুবলীকে কাঠগড়ায় দেখে মায়ের কাছে যেতে চান মেয়ে নাজা। তবে পুলিশ সদস্যরা তাকে যেতে দেননি। আদালতের দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন নাজা। তাকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়। মেয়েকে দেখে বুবলীকেও কাঁদতে দেখা যায়। তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা নাজাকে বের করে দিচ্ছিলেন। তখন নাজা বলেন, ‘উনি আমার আম্মু হন।’ পুলিশের নিরাপত্তার দায়িত্বের মাঝে সে আদালতের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় এক পুলিশ সদস্য এসে তাকে বলেন, ‘মোবাইল দিয়ে ছবি তুলবেন না। তাহলে গ্রেফতার করবো।’ এ সময় নাজা বলেন, ‘সবাইকেই তো ধরছেন। ধরে তো বংশ পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। আমাকেও ধরেন।’
অন্য পুরুষ আসামিদের কারণে বুবলীকে কাঠগড়ার সামনের অংশে চলে যেতে হয়। শুনানি চলাকালে নাজা বারবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছিলেন। বুবলী এক সময় শুনানি শুনছিলেন। এর মাঝে মাঝে মেয়েকে দেখছিলেন। আদালতের বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা বুবলীর বোন, ভাগ্নেরা তাকে দেখছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে কার্যক্রমে নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছে। আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় যাচ্ছি। তারা সেটা বাধাগ্রস্ত করছে। নির্বাচন যেন না হয় এজন্য তারা কাছ করছে। যাতে উস্কানিমূলক কাজ করতে না পারে, যারা বিশৃঙ্খলা করছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিছু নেতা যারা পাশের দেশে পলাতক রয়েছেন, তারা নকশা করছে আর এরা প্রতিপালন করছে। রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
বুবলীর পক্ষে মোর্শেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘এজাহারে তার নাম ছিল না। সন্দিগ্ধ হিসেবে গ্রেফতার করেছে। আর সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা এজাহারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ভিডিও ফুটেজেও তাকে দেখা যায়নি। তার স্বামী নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। দেশের শ্রেষ্ঠ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। বুবলী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ করার কারণে তাকে গ্রেফতার করেছে। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করছি।’
৩ টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে এজলাস থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বোনকে ধরতে যান বুবলী। তবে পুলিশ সদস্যরা তাকে টেনে নিয়ে যান। এরপর তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তেজগাঁও থানার ডেইলি স্টারের সামনে থেকে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে পান্থপথ অভিমুখে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয়। জনমনে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালাচ্ছিল। এ অবস্থায় ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানার ও চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন তেজগাঁও থানার এসআই মো. আব্দুল কাদের ২৫ জনকে আসামি করে সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলা করেন।