
দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখ খুললেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বহুল আলোচিত সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিচার, এবং বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির সার্বিক অবস্থান।
এই সাক্ষাৎকারটি আগ্রহভরে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা গালিব। সোমবার (৬ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি লিখেছেন, সাক্ষাৎকারটির বেশ কিছু অংশ তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে, যদিও কিছু বিষয়ে তিনি আরও খোলামেলা বক্তব্য আশা করেছিলেন।
গালিব লিখেছেন, “তারেক রহমানের বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ফার্স্ট পারসনের অনুপস্থিতি। ‘আমি’, ‘আমার দল’, ‘আমার দেশ’ নয়—বরং তিনি বারবার বলেছেন ‘জনগণ’, ‘দেশ’। একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দচয়ন সত্যিই প্রশংসনীয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আওয়ামী লীগের সময় তারেক রহমান ও তার পরিবার যে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা তিনি সাক্ষাৎকারে আবেগ নিয়ে শেয়ার করেছেন, কিন্তু সেটিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষোভে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং এই অন্যায়ের অভিজ্ঞতাকে তিনি অনেক মানুষের বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন—এ অংশটিই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।”
তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে তারেক রহমানের অবস্থানকে কিছুটা “কৌশলী নীরবতা” বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক গালিব। তার ভাষায়, “গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি কোনো অবস্থান নেননি, বরং তা জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন—যা এক ধরনের পাশ কাটানোর ইঙ্গিত বহন করে। অতীতে জামায়াতও অনুরূপভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছিল, সেখানেও আমি একই সমালোচনা করেছি।”
বিএনপির সাংগঠনিক সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্টতা অনুপস্থিত বলে মনে করেন গালিব। তিনি লিখেছেন, “বিএনপিকে দল হিসেবে গুছিয়ে তোলা যে এখন সবচেয়ে জরুরি, তা তার বক্তব্যে তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বরং মনে হয়েছে, সরকারে এলে আইনশৃঙ্খলা পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই তিনি সমাধান দেখতে চান। কিন্তু আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক সংস্কার ছাড়া সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
মির্জা গালিবের এই বিশ্লেষণ সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার মন্তব্যকে একটি একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন, আবার কেউ কেউ একে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা বলেও অভিহিত করছেন।