
ছয় বছর আগে ছাত্রলীগের নির্যাতনে প্রাণ হারানো বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের কারণে মানুষের ‘চেতনা জেগেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “২০১৮ সালে কুষ্টিয়ায় আমাকে যারা নির্মমভাবে আক্রমণ করেছিল, তারা চেয়েছিল আমি যেন আর না বাঁচি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় আমি বেঁচে গেছি। আল্লাহ আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেননি।
“আবরার যে আত্মত্যাগ করেছে, তা আজ দেশের তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছে। আমার দশকের পর দশক ধরে লেখা হয়তো এতটা প্রভাব ফেলতে পারেনি, কিন্তু আবরারের রক্তই মানুষের চেতনা জাগিয়েছে।”
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ডাকসুর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনার ও প্রদর্শনীতে উদ্বোধক ছিলেন শহিদ আবরারের পিতা মো. বরকত উল্লাহ।
বুয়েটের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের এক সময়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ আবরার ফাহাদ শহীদ হতে পেরেছেন, আমি পারিনি।
“…আমার সঙ্গে শহীদ আবরারের কিছু মিল আছে, আবার কিছু অমিলও আছে। আমরা দুজনই বুয়েটের ছাত্র, দুজনেই শেরেবাংলা হলে ছিলাম; দুজনেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এই মিলগুলো আমার কাছে গৌরবের।”
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “শহীদ আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তবুও তিনি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল অটল।
“সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার রক্ত বৃথা যায়নি; তিনি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি দেখা গেছে, বাংলাদেশের কিছু জেনারেল ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। অথচ এদের মধ্যে একজন ছিলেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। প্রশ্ন হলো, কোনটা প্রকৃত দেশপ্রেম?
“ওই জেনারেলের নাকি শহীদ আবরারের? আমার বিশ্বাস, আমাদের মুক্তির জন্য প্রয়োজন আবরারের মতো দেশপ্রেমিক তরুণ, ক্ষমতার দাস জেনারেল নয়।”
আওয়ামী লীগের আমলে ‘ভারতের প্রতি আনুগত্যশীল’ সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা বিকৃত হয়েছে। এখানে প্রগতিশীল মানে হয়ে গেছে ইসলামবিদ্বেষী, আর ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যশীলতা; এটাই যেন আমাদের সংস্কৃতি।
“এই ভণ্ড প্রগতিশীলতার মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। প্রকৃত প্রগতিশীলতা মানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশ এক জটিল ভূরাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছে—একদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারত, অন্যদিকে মিয়ানমার। এই অবস্থায় আমাদের সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদী হবে। আমাদের তরুণরাই এই সংগ্রামের মূল শক্তি।”
মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমি আজ আশাবাদী। কারণ তরুণরা জেগে উঠেছে। জুলাই বিপ্লবে আমরা যে জাতীয় চেতনার উত্থান দেখেছি, সেটিই প্রমাণ করে- বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার আসল অর্থ বুঝতে শুরু করেছে। শহীদ আবরার সেই জাগরণের প্রতীক।”
অনুষ্ঠানে সাময়িকী জবান’র সম্পাদক রেজাউল করিম রনি বলেন, “নাগরিক হিসেবে যার সার্বভৌমত্বের বোধ নাই, তার মত নির্বোধ আর হয় না। সার্বভৌমত্বের মালিকানা বিএনপির না, জামায়াতের না, এনসিপির না; বরং আপনার, আমার প্রত্যেকটা নাগরিকের।
“আমরা যদি মনে করি, আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে বিএনপি বা জামাত বা এনসিপি; না। তারা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে না, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে আবরার ফাহাদের মত ব্যক্তিরা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করি আমি, আপনি। আমাদের সম্মিলিত আত্মদানের মধ্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অটুট থাকবে। এজন্য সার্বভৌমত্বের এই মালিকানা আমরা কোনো দলের ওপর অর্পণ করব না।”