ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেসে থাকতে চান জাতীয় পার্টির (জাপা) রওশনপন্থিরা। এ জন্য সাংগঠনিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে দল গোছাতে চলতি মাস থেকেই কাজ শুরু করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিভাগীয় জেলায় সাংগঠনিক কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ডসহ নির্বাচনমুখী অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দলটি। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে রওশনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগাতে চায় তারা।
বিএনপির হাইকমান্ডসহ নির্বাচনমুখী অন্যান্য দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এমন এক জাপা নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের দলের চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। মাঝে পরিস্থিতি বিবেচনায় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদে থাকতে হয়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে রওশন এরশাদ বিরোধী দলে থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। সংসদেও যেতে পারেননি। তার জায়গায় জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসে। তখন নির্বাচনে অংশ নিয়ে মূলত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে তারা সহায়তা করে। বলা যায় আওয়ামী লীগ তখন আমাদের মাইনাস করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তন হয়েছে। আমরা মনে করি, নতুন করে দলকে গোছানোর এখনই সময়। কারণ সামনে নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এ জন্য বিএনপির হাইকমান্ডসহ নির্বাচনমুখী অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার কয়েকজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জি এম কাদের আসলে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিস্ট সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তারা তখন নির্বাচনে অংশ না নিলে আজ দেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। তারা রওশন এরশাদকে মাইনাস করে নির্বাচনে অংশ নেয়।
এ জন্য রাজনৈতিকভাবে যা যা করা দরকার জি এম কাদেরের নেতৃত্বে তারা তাই করেছে। জাপা নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই আগামীতে আর কোনো সরকার যেন ফ্যাসিস্ট হিসেবে সামনে না আসে- আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেটাই। দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার এখনই সময়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নতুন শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যাবে। জানা যায়, নির্বাচনকে টার্গেট করে সাংগঠনিকভাবে চলতি মাস থেকেই কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থিরা।
এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি মাস থেকে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা শুরু হবে। প্রথমে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সভা করব। তারপর সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ সব বিভাগে প্রতিনিধি সভা করা হবে। এরপরই কর্মিসভা শুরু হবে। আগামী মার্চ পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এপ্রিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি সভা হবে। পরে বর্ধিত সভা করব। ওই বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হবে আমরা রাজনীতিতে কীভাবে দেশ ও মানুষের পাশে থাকতে পারি। এসব নিয়ে একটি চূড়ান্ত রোডম্যাপের দিকে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন মানুষ দেখতে শুরু করেছেন-এই দেখার বীজ কিন্তু রোপণ করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আমরা এটাকে আরও গতিশীল করব। এতে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন সব মানুষ তাদের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা পাবে- এটাই আমাদের স্লোগান।