Image description

জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল হিসেবে উল্লেখ করে দলটির আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বৈষম্যহীন, মানবিক, দুর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না পর্যন্ত আমরা থামব না।’

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের টাউন মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।

জামায়াত আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল। সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে, হাজার নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামেও হত্যা করা হয়েছে। হাট-ঘাট, মসজিদ-মাদরাসা, এমনকি মন্দিরেও লুটপাট চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা পালিয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজ সবাই পালিয়েছে। তাই বৈষম্যহীন, মানবিক, দুর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না পর্যন্ত আমরা থামবো না। অর্থাৎ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থামবে না।’

আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির বলেন, ‘ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ মানুষদের হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে। তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদও লুট করেছে। তারা উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘পর পর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানেরা বিপ্লব ঘটিয়ে ২৪-এ স্বাধীনতা এনেছেন। ফলে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎসাহস শেখ হাসিনার ছিল না। যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছিল জনগণ তাদেরকে একদফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।’

ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে, ইনশাআল্লাহ। তরুণ-যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশীশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব, ইনশাআল্লাহ।’

এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা কারো টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালোটাকা ও পেশীশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যারা কালোটাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদেরকে ‘না’ বলে দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে। এসব টাকা জাল ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত আনতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের খুঁজে খুঁজে এনে ওই কাশিমপুর জেলে পাঠাতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদা কিভাবে পূরণ করা যায় সেটা জাতির সামনে কিভাবে পেশ করা যায় তারই এক মাইলফলক হয়ে থাকবে জেলা জামায়াতের আজকের সম্মেলন। মানবতার কল্যাণে জামায়াত কাজ করবে এবং করে আসছে। মানুষের ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা, ভাতের অধিকার, সার্বভৌমত্ব অধিকার ফেরানোর জন্য কাজ করছে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: জাহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর জেলা শাখার আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমির আলী আজম, কুষ্টিয়া জেলা আমির মাওলানা অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজ উদ্দীন খাঁন, চুয়াডাঙ্গা জেল জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল প্রমুখ।

কর্মী সম্মেলনটি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, বিগত ২০ বছরে চুয়াডাঙ্গাতে কর্মী সম্মেলন হয়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সকল কর্মপরিষদের সদস্যরা, জেলার পাঁচটি থানার অধিনে সাংগঠনিক আটজন জামায়াতের থানা আমির, স্থানীয় জামায়াত নেতারাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী এ কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।