
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হলো তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা। এটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষার ব্যয় বহন করার চেয়ে অনেক কম সম্পদসাপেক্ষ হবে। রোহিঙ্গারা বারবার স্পষ্ট করেছেন—তারা নিজ দেশে ফিরতে চান। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে, সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরতে দেওয়া প্রয়োজন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ আয়োজিত বৈঠকে ৭৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে রাজনৈতিক সমর্থন অর্জন, আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখা, পরিস্থিতির সামগ্রিক মূল্যায়ন এবং মানবাধিকারসহ সংকটের মূল কারণগুলো আলোচনার লক্ষ্য ছিলো।
ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ অনুপস্থিত, এবং আন্তর্জাতিক সহায়তাও মারাত্মক ঘাটতির মুখে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করে এবং দ্রুত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অজুহাত দেখানো উচিৎ নয়।
বাংলাদেশ এই সংকটের এক ভুক্তভোগী দেশ। আমাদের ওপর রয়েছে বিরাট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ। মাদক প্রবাহসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় রেখে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাতটি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন:
১. নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন, যা রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
২. মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করা এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা—প্রথমে বাংলাদেশে সদ্য আগত ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের ফেরত পাঠানো।
৩. রাখাইনের স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় করা এবং সেখানে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা।
৪. রাখাইন সমাজ ও প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই একীভূতকরণের জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (Joint Response Plan) পূর্ণ অর্থায়নে দাতাদের সহায়তা নিশ্চিত করা।
৬. দায়বদ্ধতা ও পুনঃন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
৭. মাদক অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং সীমান্ত পারাপার অপরাধ দমন করা।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষায় বসিয়ে রাখতে পারে না। আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—একসাথে কাজ করে এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”