
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ। ইতিমধ্যে খুন, হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে সেখানে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য মো. ফখরুল ইসলামকে ঘিরে দু‘টি বলয় এখন মুখোমুখি। কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসন। এ আসনের সাবেক দুই এমপি হলেন- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও ওবায়দুল কাদের। ব্যারিস্টার মওদুদ মারা গেছেন। ওবায়দুল কাদের এখন দেশছাড়া। ফলে বিএনপি’র টিকিট পেতে মরিয়া আবেদ ও ফখরুল। এ আসনে আরও দু’জন বিএনপি’র প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় রয়েছেন। তারা হলেন-ব্যারিস্টার মওদুদ পত্নী হাসনা মওদুদ ও গোলাম হায়দার বিএসসি। সবকিছু ছাপিয়ে এখন আবেদ ও ফখরুল গ্রুপের দ্বন্দ্বে জর্জরিত বিএনপি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিভক্তি। এক গ্রুপ আবেদের পক্ষে অন্য গ্রুপ ফখরুলের পক্ষে। এ দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত এখন কোম্পানীগঞ্জ। এই কোন্দলে চরাঞ্চলে রক্তপাতও হয়েছে। গত বছর ২৭শে আগস্ট রাতে উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল মতিন তোতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এক গ্রুপের নেতার মদত রয়েছে। তোতা বজলুল করীম চৌধুরী আবেদের অনুসারী ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, নিহতের ছেলে যুবদল নেতা ইব্রাহীম তোতা ও ইসমাইল তোতা ঘাট থেকে চাঁদাবাজি করতেন। ওই টাকা থেকে ভাগ পেতেন উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ অনেক নেতা। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক মামলাও হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। নমিনেশন পাবো বলে প্রত্যাশা করি। আবেদের ব্যাপারে তিনি বলেন, বজলুল করিম আবেদও নমিনেশন চাইছেন। তবে আমার সঙ্গে কারও প্রতিযোগিতা নেই। জনগণই হলো আমার ভরসা। আপনি এবং আবেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে দু’টি খুন হয়েছে। হামলায় অনেকে আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার সরকার দেশ ছাড়ে। তোতা চেয়ারম্যান খুন হন ক’দিন পরে। ঘাট দখল নিয়ে দু’পক্ষের ঝগড়ায় তিনি খুন হন। এখানে বিএনপি’র সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব কাজ করেনি। আবেদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আবেদ আমেরিকায় থাকে। পূর্বে তাকে মাঠে দেখা যায়নি। ৫ই আগস্টের পর তিনি দেশে আসেন। এর আগে আবেদ নামে কেউ নির্বাচন করবে সেটা জানতামই না। তার সঙ্গে তাহলে দ্বন্দ্ব থাকবে কেন? আর আমি শত নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি’র সকল কার্যক্রমে আমার এলাকার লোকজনকে নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছি। ৪০টি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামের সমাবেশে যোগ দিয়েছি। আমিতো ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র হয়ে লড়েছি। ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব আমাকে সঙ্গে নিয়ে সে সময় আমার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ভোট ডাকাতির নির্বাচন তো শুরু হয় সে সময়। সে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ভোটের দিন নির্বাচন বর্জন করি। তারপরও ৪৭ হাজার ভোট পেয়েছি। আমি পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাহাবুদ্দিনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আমি বলতে চাই হঠাৎ করে কেউ নির্বাচনী মাঠে এসে জনমত তৈরি করে ফেলবে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। আমি স্বৈরাচারী আমলে জনগণের পাশে থেকেছি। এলাকার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ঢাকার গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ, ২৮শে অক্টোবরের সমাবেশে এলাকার লোকজনকে নিয়ে যোগ দেই।
ফখরুল বলেন, আমি কারও পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাই না। মনোনয়ন কাকে দেয়া হবে দল এলাকায় এলাকায় জরিপ চালাচ্ছে। আমি রাজনীতি করি জনগণের জন্য। রাজনীতি জনগণ না থাকলে কার জন্য করবেন? এ মুহূর্তে আমি এলাকায় আছি। দুর্গাপূজায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবো। দুর্গাপূজা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ। আপনার বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করেছেন, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে আপনার সুসম্পর্ক রয়েছে। এস আলমের সহযোগী হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব আমার বিরোধীরা প্রচার করে। জনগণকে ভালোবাসি। জনগণের ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে নেবে।
ওদিকে বজলুর করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবের সান্নিধ্য পেয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধ ২৬টি মামলা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপিতে দ্বন্দ্বের ব্যাপারে বলেন, একটি পরিবারেও দেখবেন সবাই সবাইকে সমানভাবে পছন্দ করে না। এমনটা দলেও হতে পারে। কেউ আমাকে পছন্দ করে কেউ অন্য কাউকে। তবে আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এলাকায় কাজ করছি। দল জরিপ করছে। সে অনুযায়ী মনোনয়ন দেবে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি হচ্ছে আপনার এলাকায়। এ ব্যাপারে কী বলবেন এমন প্রশ্নে আবেদ বলেন, ইতিমধ্যে আমার এলাকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করা হয়। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ মুহূর্তে আমি এলাকায় আছি। দুর্গাপূজায় বিভিন্ন ইউনিটকে নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, কে কখন, কীভাবে দলে এসেছে এলাকাবাসী জানেন। আমি এসব বলতে চাই না। আমি চাই এলাকার মানুষের সেবা করতে।
ওদিকে ২৭শে সেপ্টেম্বর মানবজমিন এ ‘১১ খলিফার নিয়ন্ত্রণে মির্জা কাদেরের রাজত্ব’ শীর্ষক সংবাদের একাংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন, ফখরুল ইসলাম। প্রতিবাদপত্রে তিনি তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে উল্লেখ করেন। সংবাদে নিজের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।