Image description

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সামনে অধিবেশন চলাকালে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটায় বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুস ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ রাজনৈতিক নেতাদের স্বাগত জানাতে জড়ো হন।

 

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের আগমনের প্রতিবাদ জানাতে একই জায়গায় একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হলেও বিএনপির শোডাউনের সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি। একজন নেতাকে বেদম মারধরের পর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ উল্টো আক্রান্ত নেতাকে তুলে নিয়ে যায়।

 

এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ওই এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। এরআগে আওয়ামী লীগ জেকসন হাইটস, জেএফকে বিমানবন্দর ও মেনহাটনের গ্র্যান্ড হায়াৎ হোটেলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন নিজুম মজুমদার। অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে মারামারির সংবাদ শুনে তিনি আর সমাবেশে যোগ দেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টায় জাতিসংঘের সদরদপ্তরের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ভাষণ দেন। ওই সময় পুরো অধিবেশন স্থল ফাঁকা হয়ে যায়। বাংলাদেশের কূটনীতিকরাসহ প্রায় সব দেশের কূটনীতিক ওয়াকআউট করে চলে যান।

নেতানিয়াহু অধিবেশন স্থল থেকে চলে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেন।

 

bnp1

 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উভয় দলই নিউইয়র্ক পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বেলা ১১ টা হতে ১ টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি পায়। পুলিশ উভয় দলকে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে কয়েকশ মিটার দূরের ৪৭ অ্যাভিনিউতে সমবেত হওয়ার অনুমতি দেয়।

বিএনপি নেতারা জানান, গত তিনদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে শুক্রবারের সমাবেশকে তারা টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। ঢাকা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও লন্ডন থেকে আনোয়ার হোসেন খোকন নিউইয়র্কে এসে সবকিছু তদারকি করেন। শুক্রবার ১১ টা বাজার আগেই ৪৭ অ্যাভিনিউতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো করে বিএনপি।

এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে নির্ধারিত জায়গায় সমবেত হতে না পেরে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েন। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আর জে রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন বিএনপি নেতাদের কাছে গিয়ে তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন।

এ পর্যায়ে বিএনপির এক নেতা বলেন, আপনাদের তো তেমন লোকজন নেই। আমাদের সমাবেশের পর আপনারা এসে সমাবেশ করলে ভালো হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় চলে যাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি গালিগালাজ শুরু করেন। ওই অবস্থায় তাকে ডাস্টবিনের ঢাকনা খুলে এনে বেদম মারধর করেন বিএনপির এক কর্মী। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত আওয়ামী লীগ নেতাকে উদ্ধার করে তার স্ত্রীর জিম্মায় দেন।

আহত আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের সমাবেশের ভেতর দিয়ে আসার সময় আমাকে মারধর করে তারা।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ সম্পর্কে বিএনপির এক নেতা বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন গত তিন/চার দিন ধরে নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের নেতাদের ওপর বর্বর হামলা করেছে। হোটেলে এসেও আমাদের নেতাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের নেত্রী ভারতের আশ্রয়ে থেকে ফোনে তার নেতাকর্মী নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নেতাদের নাজেহাল করার জন্য।

 

bnp

 

এর সব রেকর্ড, নথি, ভিডিও ফুটেজ আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়েছি। এছাড়াও এনসিপি নেতা আখতার হোসেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। এখন ওরা গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিজুম মজুমদার নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা দলীয় কর্মীদের নিয়ে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সামনে আসেন। তারা সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগেই উভয়পক্ষ হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে নিজুম মজুমদার এলাকা ছেড়ে হোটেলে চলে যান।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আনোয়ার হোসেন খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ,গাজী মনির, গোলাম ফারুক শাহীন, জসিম ভূইয়া, অলিউল্লা আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান সাইদ, ভিপি জসিম, আহবাব চৌধুরী খোকান, ফয়েজ চৌধুরী, দেওয়ান কাওসার, সোহরাব হোসেন, বদিউল আলম, নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, আবু সাঈদ, বদরুল হক আজাদ, জুয়েল রানা, আবদুস সবুরসহ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন স্টেট বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের সাড়ে ১৫ বছরের অবৈধ শাসনামলে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে আমাদের হাজারো ছাত্রজনতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এখনো তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে ফিরে আসতে চায়।