
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেয়া ভাষণের প্রশংসা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে প্রশংসনীয় বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা আন্তর্জাতিক মহলে অংশগ্রহণ করেছেন। এটি সত্যিই ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয় ঘটনা।’
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াত নেতা ড. নকীবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির প্রথম সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা।
এর আগে শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর কখনও স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না। দেশের গণতন্ত্র আর কখনও হুমকির মুখে পড়বে না। দলমত নির্বিশেষে গঠিত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই দেশের গণতন্ত্র ও সংস্কার কার্যক্রম টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে। জনগণের আত্মত্যাগে অর্জিত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে আর কোনো শক্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
ড. ইউনূস বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আত্মত্যাগ করেছিলাম তা গত পাঁচ দশকে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। জনগণকে বারবার সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, চলতি বছর পালিত হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’এর প্রথমবার্ষিকী, যেখানে তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই অভ্যুত্থান বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। আর সেই দায়িত্বই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে জনগণ।
ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাহী আদেশে সংস্কার চালানো সম্ভব হলেও সরকার বেছে নিয়েছে কঠিন পথ- অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রক্রিয়া। এজন্য বিচার বিভাগ, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন ও নারী অধিকারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
তিনি জানান, এই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এর ফলশ্রুতিতেই গত জুলাই মাসে সব দল একসঙ্গে ‘জুলাই ঘোষণা’র মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রমে সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অঙ্গীকারের ফলে আগামী নির্বাচনে যে দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার বাস্তবায়নে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর কখনও হুমকির মুখে পড়বে না।