Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেলের ভরাডুবির জন্য গ্রুপিং, অনিয়ম এবং শাখার শীর্ষ নেতাদের জয়ের প্রতি অনিচ্ছাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত এক নেতা। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক একাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি জাকসুতে  ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের পরাজয়ের কারণগুলো সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরেন।

স্ট্যাটাস দেওয়া ওই ছাত্রদল নেতার নাম আল ইমরান ৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন৷ এছাড়া জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

জাকসু নির্বাচন ২০২৫ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি - এক ময়নাতদন্ত

জাকসু নির্বাচন ২০২৫ এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সকল প্রার্থী তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা এরও পরে অবস্থান করছেন। একমাত্র মমিনুল ইসলাম স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা করে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন।

ডাকসুতে ছাত্রদল অন্তত দ্বিতীয় স্থানে ছিলো। ডাকসুর যারা শিবিরের প্রার্থী ছিলো তারা সবাই দেশব্যাপী পরিচিত ছিলো অপরদিকে জাকসুতে যারা শিবিরের প্রার্থী ছিলো তারা তাদের মধ্যে একমাত্র জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম ছাড়া ক্যাম্পাসে আর তেমন কোনো পরিচিতমুখ ছিলো না। অপরদিকে জাকসুতে ছাত্রদলের বেশ ভালো কিছু পরিচিত ফেইস ছিলো যারা নিজস্ব ক্যাপাসিটি দিয়ে জিতে আসতে পারতো।

কেন এই পরাজয়

১। পূর্ব পরিকল্পনা নাই অনেকে সিউর ছিলো জাকসু হবে না অথচ শিবির কয়েকমাস যাবত প্রস্তুতি নিচ্ছে, তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং সময় নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছে।

২। জাকসুর মাত্র কয়েকদিন পূর্বে বিতর্কিত হল কমিটি প্রদান এবং টিএসসিতে অন্তর্দলীয় কোন্দল ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।

৩। নিজেদের ভালো কাজগুলোকে মার্কেটিং করতে না পারা।

৪। মাইম্যান রাজনীতি। হল কমিটির ক্ষেত্রে যেমন মাইম্যান বসানো তেমনি জাকসুর প্রার্থী সিলেকশনে মাইম্যান বসানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্যতা, পরিচিতি এবং নেতৃত্বপ্রদানের শক্তিমত্তা যাচাই-বাছাই করা হয়নি।

৫। হল সংসদেও সেইম অবস্থা সেজন্যে বিদ্রোহী কয়েকজন পাশ করলেও ছাত্রদল মনোনীত কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে জিতে আসতে পারেনি।

৬। বরাদ্দ নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করা এবং সেগুলোর প্রপার ব্যবহার না করা।

৭। সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে সিনিয়র নেতৃত্ব। বর্তমান রানিং শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের বয়সের গ্যাপ এক যুগের ফলে তাদের চিন্তাভাবনা ১ যুগ আগের। উনারা সেসময় ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতিত হয়ে হলে থাকতে পারেননি এবং উনারা বর্তমান হলগুলোর পরিবেশ সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না।

৮। জাকসুর প্রার্থী ঠিক করেছেন ৩৮-৪৩ ব্যাচের সিনিয়র নেতৃত্ব রানিং শিক্ষার্থীদের সাথে একদিনও জাকসু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি! অথচ সবকিছুর ভালো ওভারভিউ দিতে পারতেন ৪৬-৫৩ ব্যাচ।

৯। বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত ছাত্রদল এবং উনারা বিএনপির স্বার্থেও কখনও সম্মিলিতভাবে একত্রিত হবেন না গ্যারান্টি দিতে পারি।

১০।সিনিয়ররা চেয়েছিলেন যেন কেউ জিতে না আসে তাহলে তাদের নেতৃত্ব লম্বা সময় ধরে থাকবে। (সঠিক নাও হতে পারে)

১১।শীর্ষ নেতারা নিজেদের গ্রুপের বাইরে কাউকে গ্রহণ করতে পারে না। ভালো সম্ভাবনাময় কেউ থাকলে আর কিছু পারুক বা না পারুক তাদের মাইনাস কিভাবে করতে হবে সেটা ভালোই বের করতে পারেন।

১২। নির্বাচন বর্জনের সময় আরেকটু পরে হলে কয়েকজন জিতে আসতে পারতো সেটাও উনাদের মাথায় আসে নাই।

১৩। শিবির এবং অন্যান্য সংগঠন এর চেয়ে ছাত্রদল কেনো ভালো অপশন সেটি বুঝাতে ব্যর্থ হওয়া।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগরের জন্য সিনিয়র নেতৃত্ব ঠিক করে দেওয়ার মাধ্যমে হয়তো চিন্তা করেছিলো আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের জন্য মসৃণ পথ তৈরী করবেন। কিন্তু এই কয়েক মাসে পরিষ্কার উনারা মসৃণ নয় এমন কণ্টকাকীর্ণ পথ তৈরী করে রেখে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগরে যেন বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও খুব বেশী ভালো অবস্থানে আসতে পারবে না। প্রায় সকল রানিং শিক্ষার্থীরা যারা ছাত্রদল সবাই উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত কিন্তু কেউ এগুলো নিয়ে কথা বলতে বা লেখালেখি করতে সাহস পাবেন না। আমি লিখে গেলাম। সকল রানিং শিক্ষার্থী যারা ছাত্রদল করেন সবার উদ্দেশ্য বলতে চাই ক্ষত বেশী গভীর হওয়ার আগেই সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নিন না হলে আগামী ৫ বছরেও এই ক্ষত পুরণ করতে পারবেন না।