Image description

হাতলযুক্ত চেয়ারে বসে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন। অন্যসব পরীক্ষার মতোই নির্ধারিত খাতায় কলম দিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখছেন তারা। তবে সব শিক্ষার্থীর সামনেই আছে মোবাইল ফোন। সেই ফোন দেখেই খাতায় উত্তর লিখছেন তারা। নওগাঁ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে এভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার বেশকিছু ভিডিও এসেছে কালবেলার হাতে। ভিডিওগুলোয় ইনস্টিটিউটের ২য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ পর্বের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন দেখে উত্তরপত্র লিখতে দেখা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এভাবে শিক্ষার্থীদের নকল করতে সহায়তা করার পেছনে রয়েছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোহবার হোসেন। নকলে সহায়তা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অন্য শিক্ষার্থীদের। এসব অভিযোগ সংবলিত একটি চিঠি বস্ত্র ও পাট অধিদপ্তরে জমা দিয়ে তারা অধ্যক্ষের প্রত্যাহারও চেয়েছেন।

 

অধিদপ্তরে জমা দেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ পর্বের ফরম ফিলাপের নির্ধারিত তারিখ পার হলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুসারে লেট ফি হিসেবে ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা আদায় করেন। কোনো শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে তাকে ছাত্রলীগ বানিয়ে বিস্ফোরক মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ছাড়া ফল পুনর্নিরীক্ষণে বোর্ড নির্ধারিত ফি ৩০০ টাকা হলেও তিনি ৮০০ টাকা আদায় করেন। অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পুনঃসংযোগ ফি ২০০ টাকা হলেও এখানে তিনি ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। ২৪-২৫ সেশনের মাইগ্রেশনের শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে অনেকেরই ভর্তির ৫ হাজার ৮০০ টাকা করে ফেরত দেননি তিনি।

প্রতিষ্ঠানপ্রধান হয়েও অধ্যক্ষ রেজিস্ট্রেশন শাখার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, ছাত্রদের অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলির আবেদন নিয়ে গেলে অধ্যক্ষ অনুমতি দেন না; বরং বদলির শর্ত হিসেবে অনুমতির জন্য টাকা দাবি করেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান হয়েও হোস্টেল সুপারের দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন। সেখানেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন।

 

এ ছাড়াও ব্যবহারিক পরীক্ষার বেশি নম্বর প্রদানের আশ্বাস দিয়ে টাকা দাবি এবং নির্দিষ্ট লাইব্রেরি (ভাই ভাই লাইব্রেরি) থেকে বই ও ব্যবহারিক খাতা না কিনলে ব্যবহারিকে নম্বর কম দেওয়ার হুমকি দেওয়াসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোহবার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। আমি এখানে এসে কিছু ভালো কাজ করেছি, যে কারণে একটি মহল শিক্ষার্থীদের নাম করে এসব করছে।’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল দেখে পরীক্ষা দেওয়ার ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমার সময়ের নয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের।’

তবে ভিডিওতে দেখা গেছে, পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে। আর সোহবার হোসেন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন গত বছর।

এ বিষয়ে জানতে বস্ত্র অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব, শিক্ষা) হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব প্রশ্ন শুনে আধাঘণ্টা পরে ফোন দিতে বলেন। তবে পরে ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেননি।