Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সমন্বয়হীনতা, গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। দলের ছাত্র সংগঠনের এমন শোচনীয় পরাজয়ে হতভম্ব বিএনপি। পরাজয়ের জন্য ন্যূনতম প্রস্তুত ছিলেন না নেতারা। যদিও অনেক প্রার্থী নির্বাচনী কারচুপি ও ফলাফল প্রভাবিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এখন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার কারণ খুঁজতে তথ্য নিয়ে গতকালই বৈঠকে বসেন। তবে প্রতিপক্ষের কৌশলে এমন শোচনীয় পরাজয় হয়েছে মনে করছেন নেতারা। তাদের ভাষ্য, ছাত্রদলের পাল্টা কোনো কৌশল ছিল না। ছিল না সমন্বয়। নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। 

কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ৫ জন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হলো- ভাগাভাগির হল কমিটি, হল কমিটির প্রার্থীদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি নেই, বিএনপি’র মাত্র একজন নেতার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপিপন্থি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন ফলাফল হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের ধারাবাহিক যোগাযোগ না থাকাও তাদের সঙ্গে দূরত্বের বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদকীয় তো দূরের কথা একজন সদস্য প্রার্থীও বিজয়ী হয়ে বের হয়ে আসতে পারেননি বলেও মনে করছেন তারা। এ ছাড়া অল্প সময়ে প্যানেল গঠন করায় বিভিন্ন গ্রুপকে এক প্ল্যাটফরমে আনতে পারেনি ছাত্রদল। নির্বাচনে দলের প্রত্যেক স্তরের নেতাকর্মী আর সমর্থকদের পাশে টানতেও পারেনি। শুধুমাত্র প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষক এবং নারী ভোটার কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল খুবই দুর্বল। 

ওদিকে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নে গতকাল বৈঠকে বসেছেন ছাত্রদলের নেতারা। বৈঠক শেষে সংগঠনের মন্তব্য জানাবে। বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের সমস্ত ডাটা নিয়ে নেতারা বসেছেন। এর পরে আমাদের মন্তব্য আমরা জানাবো। 
গত মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনে ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সদস্য পদ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে ১১টিতে জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সদস্যরা। একটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যটিতে জয়ী বাম-সমর্থিত প্রার্থী। এরমধ্যে কোনো পদেই ছাত্রদলের প্যানেলের নেতারা জয়লাভ করতে পারেনি, এমনকি ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক বেশি। 

ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের যে ফলাফল এসেছে, তা মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের প্রচারণায় এসেছে। যে প্রচারণা ৫ই আগস্টের পরপরই শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি কেন্দ্র থেকে সে ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রদলের তিনজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের হল কমিটিসহ সব জায়গায় যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর পরিবর্তে তরুণদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ আমার লোক না হলে তাকে কোনো পদ-পদবি দেয়া যাবে না। অথচ নির্বাচনের দিন হল কমিটির নেতাদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর বাইরে পারস্পরিক বিভেদ এবং দ্বন্দ্বও ফল বিপর্যয়ের কারণ বলেও মনে করছেন তারা। ওদিকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় এক নেতার দিকনির্দেশনায় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা কাজ করছেন। এই নেতা নির্বাচনের দিন সাবেক ছাত্রদলের কোনো নেতার ফোনও রিসিভ করেননি এবং কোনো নির্দেশনা দেননি। ডাকসু’র ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদেরও নির্বাচনের দিন তিনি কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। 

এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে বলেও অভিযোগ ছাত্রদলের নেতাদের। তাদের ভাষ্য, ঢাবি’র ভিসি এবং প্রক্টরিয়াল বডিসহ নির্বাচনের সম্পৃক্ত শিক্ষক এবং অন্যদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবির সমর্থিত ছিলেন। এ কারণে নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল আলাদা সুবিধা পেয়েছে।  ফলাফল ঘোষণার সময় মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক পোস্টে পরিকল্পিত কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদলের প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান।