
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছে ছাত্রশিবির। ২৮টি পদের মধ্যে তারা জয় পেয়েছেন ২৩টি পদেই। শিবিরের লড়াই হয় মূলত ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সঙ্গে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদের একটি পদেও জয় পায়নি ছাত্রদল। বুধবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে লড়াই করেন ৪৫ জন। জয় পান সহ-সভাপতি (ভিপি): মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম)। তিনি ১৪ হাজার ৪২ ভোট পান। ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ’র ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম পান মাত্র ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয়, ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা হয়েছেন চতুর্থ। আর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আবদুল কাদের পঞ্চম হয়েছেন ১ হাজার ১০৩ ভোট পেয়ে।
জিএস পদে শিবিরের প্রার্থী এসএম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জিতেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম পান ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’র প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী ৪ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১ ভোট পেয়ে হয়েছেন পঞ্চম।
এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ছাত্রদলের তানভীর আল হাদি মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী পেয়েছেন ৩ হাজার ৮ ভোট। ১ হাজার ৫১১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল। আর ১ হাজার ১৩৭ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন রনি।
ডাকসু’র ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জিতেছে শিবিরের প্যানেল। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থী ফাতেমা তাসনিম জুমা, পান ১০ হাজার ৬৩১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আরিফুল ইসলাম পান ২ হাজার ৪৭০ ভোট। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইকবাল হায়দার পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট। ৪ হাজার ২৭৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব। কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উম্মে ছালমা। ৪ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সুর্মী চাকমা। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে শিবির প্যানেলের জসীমউদ্দিন খান জয় পান। তিনি ৯ হাজার ৭০৬ ভোট ও নিকটতম বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের মোহাম্মদ সাকিব পান ৩ হাজার ৯২২ ভোট।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৭৮২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। ২ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী নুরুল ইসলাম। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি। তার প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৭৭৮। তাকে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল এই পদে প্রার্থী দেয়নি। এই পদে শিবিরের প্রার্থী মো. সাজ্জাদ হোসাইন খান ৭ হাজার ১৮৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে শিবিরের প্রার্থী আরমান হোসেন ৭ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ৩ হাজার ৮৩১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী মো. আল-আমিন সরকার। ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৬১ ভোট পেয়ে জিতেছেন শিবিরের প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ। ৪ হাজার ৫০৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের রাফিজ খান। ৭ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবাইর বিন নেছারী (এবি জুবায়ের)। ছাত্রদলের প্রার্থী সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক ৩ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। তিনি ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট পান। ৪ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, ৭ হাজার ৩৮ ভোট পেয়ে হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী এমএম আল মিনহাজ। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন ২ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে শিবিরের প্রার্থী মো. জাকারিয়া ১১ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আনিকা তাহসিনা ৩ হাজার ৪২৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।
ডাকসু’র ১৩টি সদস্যপদের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছেন শিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র প্রার্থীরা। সাবিকুন নাহার তামান্না (১০ হাজার ৮৪ ভোট), সর্ব মিত্র চাকমা (৮ হাজার ৯৮৮ ভোট), ইমরান হোসাইন (৬ হাজার ২৫৬ ভোট), মোছা. আফসানা আক্তার (৫ হাজার ৭৪৭ ভোট), তাজিনুর রহমান (৫ হাজার ৬৯০ ভোট), রায়হান উদ্দীন (৫ হাজার ৮২ ভোট), মো. মিফতাহুল হোসাইন আল-মারুফ (৫ হাজার ১৫ ভোট), আনাস ইব্নে মুনির (৫ হাজার ১৫ ভোট), মো. বেলাল হোসেন অপু (৪ হাজার ৮৬৫ ভোট), মো. রাইসুল ইসলাম (৪ হাজার ৫৩৫ ভোট) ও মো. শাহিনুর রহমান (৪ হাজার ৩৯০ ভোট) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে সদস্যপদে ৪ হাজার ৯০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হেমা চাকমা। ৪ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে সদস্যপদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া।