
জুলাই অভ্যুত্থানের সুযোগে নতুন চেহারায় আবির্ভূত ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) অভাবনীয় জয় পেয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর এই সহযোগী সংগঠন যেখানে অতীতে কখনও ডাকসু নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্যানেল দিতে পারেনি, কেন্দ্রীয় সংসদের কোনো পদে কখনো জয় পায়নি, সেখানে এবার ভিপি ও জিএসসহ ডাকসুর ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে নয়টি জিতে নিয়েছে।
ছয় বছর পর মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনে ভোট হয়েছে উৎসবের আমেজে, শান্তিপূর্ণভাবে; যেখানে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন।
প্রায় সবকটি হলের ভোটাররা কেন্দ্রীয় ভিপি ও জিএস পদে শিবিরের দুই প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোতে শিবিরের প্রার্থীরা পেয়েছেন নজিরবিহীন সমর্থন।
ভোটের লড়াইয়ে শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। তবে কোনো পদেই তারা জয়ের মুখ দেখেননি। সম্পাদকীয় যে তিনটি পদ শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে সেগুলোতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ডাকসুর ভিপি পদে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নুরুল হক নুরের উত্তরসূরী হিসেবে দেশের বৃহত্তম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব দেবেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থী সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪,০৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান ৫,৭০৮ ভোট পেয়েছেন।
জিএস পদে ছাত্রশিবিরের এসএম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট।
এজিএস পদে জয়ী হয়েছেন শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি পেয়েছেন ১১,৭৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫,০৬৪ ভোট।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা শুরুর পর থেকেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের বড় জয়ের আভাস মেলে।
নানা ধরনের গুঞ্জনের মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথগুলোতে জড়ো হন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। উত্তেজনার আভাসে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কড়াকড়ি বাড়ানো হয়।
রাত ৩টার দিকেই ক্যাম্পাসের কয়েক জায়গায় ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিজয় মিছিল শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এবং স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা।
১৮ হলের ফল জড়ো করে সমন্বিত ফল প্রস্তুত করতে রাত পেরিয়ে যায়। বুধবার সকাল ৮টার পর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উদযাপনও পূর্ণতা পায়।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে এবারই প্রত্যক্ষভাবে প্রথম সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাড়া ডাকসু নির্বাচন দেখল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরসহ রাজনৈতিক সংগঠন ও স্বতন্ত্র হিসেবে অন্তত ১০ প্যানেল অংশ নিলেও ছাত্রশিবির একচেটিয়া জয় পেয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) নির্বাচনে খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি।
ছাত্রশিবির তাদের ৪৮ বছরের ইতিহাসে এবারের মত এতটা প্রকাশ্যে, অবাধে, চাঙ্গাভাব নিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ আর কখনো পায়নি।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে রাজনীতি বন্ধ ছিল। ওই সময় শিবিরের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র সমাজের’ রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে জোটবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালানোর সুযোগ ছিল না।
কিন্তু ওই সময় ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনে সক্রিয় থেকে শিবির কর্মীরা যে গোপনে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, সেই সত্য প্রকাশিত হয় চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পর।
ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এবার নিজেদের সাংগঠনিক পরিচয় নিয়েই অবাধে ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের হাজির করেছেন; শেষে তারাই হাসলেন জয়ের হাসি।
সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন যখন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে ভিপিপ্রার্থী সাদিক কায়েমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন রাত জাগার ক্লান্তি উপেক্ষা করে বিজয় উৎসব করতে থাকা কর্মী-সমর্থকরা। ভিপি পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণার আবার স্লোগানে মেতে ওঠেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
ফল ঘোষণার পর সিনেট ভবনের সামনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এসে ভিপি পদে নির্বাচিত সাদিক কায়েম বলেন, “জয় অথবা পরাজয়ের কিছু নেই। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা, শহীদদের আকাঙ্খা বিজয়ী হয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর নেতৃত্বে আমানত রেখেছে আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ, মহিউদ্দিন খানসহ ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের আমাদের প্যানেলের উপর যে আমানত রেখেছে আমরা তার হক আদায় করব।”
প্যানেল ঘোষণার সময় সংগঠনের বাইরে থেকে একজন আদিবাসী, একজন আহত জুলাই যোদ্ধা এবং অন্য সংগঠনের একজন নারী কর্মীকে প্রার্থী করে ‘অন্তর্ভুক্তির’ চমক দেখিয়েছিল শিবির। ভোটে জয়ের পরও সেই সুর পাওয়া গেল সাদিক কায়েমের কথায়।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মের যে পথের যে মতে যে আদর্শের লোক না হোক না কেন আমরা সবাই একসাথে কাজ করব। আমরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা মাল্টিকালচার হিসাবে আমরা নির্মাণ করব এবং আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমাদের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসাবে আমরা পরিণত করব।”
এদিকে রাত আড়াইটার দিকে ফল ঘোষণার প্রাথমিক পর্যায়েই তা প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদ।
নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।”
তবে তার ‘রানিং মেট’ জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানানোর কথা বলেন।
রাত সোয়া ২টার দিকে নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন- এটিই তাদের রায়, তবে এই রায়কে আমি সম্মান জানাই। আমি শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষমাণ।”
গভীর রাতে ফল বর্জনের ঘোষণা দেন ভিপি পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমাও। পরে ভোরের দিকে এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, "অভিনব পন্থায় নির্বাচন কারচুপি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো রাত হয়ে থাকবে।"
জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা উমামা বলেন, "কারচুপির নির্বাচনের জন্য ১৪০০ মানুষ মরছে! একি ইতিহাস, একি ব্যবস্থা। মাঝে দিয়ে এতগুলা পরিবার নিঃস্ব হল।
"নিজেদের হীনস্বার্থের জন্য ইসলামি ছাত্রশিবির কি পরিমাণ বেঈমানি করেছে জাতির সাথে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।"
সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিজয়ীরা
ভিপি: সাদিক কায়েম; ভোট: ১৪,০৪২
জিএস: এসএম ফরহাদ; ভোট: ১০,৭৯৪
এজিএস: মহিউদ্দীন খান; ভোট: ১১,৭৭২
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক: ফাতিমা তাসনীম জুমা (ইনকিলাব মঞ্চ); ভোট: ১০,৬৩১
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ইকবাল হায়দার; ভোট: ৭, ৮৩৩
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: উম্মে সালমা; ভোট: ৯, ৯২০
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: জসীমউদ্দিন খান (খান জসীম); ভোট: ৯৭০৬
ক্রীড়া সম্পাদক: আরমান হোসেন; ভোট: ৭,২৫৫
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: আসিফ আব্দুল্লাহ; ভোট: ৯,০৬১
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম; ভোট ৯, ৩৪৪
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ; ভোট: ৭,০৩৮
মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক: সাখাওয়াত জাকারিয়া; ভোট: ১১, ৭৪৭
তিনটি সম্পাদক পদে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ; ভোট: ৭৭৮২
সমাজসেবা সম্পাদক: যুবাইর বিন নেছারী; ভোট: ৭,৬০৮
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: সানজিদা আহমেদ তন্বি; ভোট: ১১,৭৭৮
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিপুল উৎসাহের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয় আট কেন্দ্রে। এর আগেই অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুরের আগে পর্যন্ত ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও দুপুরের পর বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।
ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে ছাত্রদলের প্রার্থীদের তরফে অভিযোগ করা হয়। এ সময় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসে চারটি প্যানেলের তরফে।
ভোটের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪' প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী অদিতি ইসলাম। ভোট কারচুপির অভিযোগও তোলেন তিনি।
পরে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের দুই প্রার্থীর ব্যালটে আগে থেকে টিক দিয়ে রাখার অভিযোগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে টিএসসিতে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। সন্ধ্যায় ভোট চুরির অভিযোগ এনে বিক্ষোভও করে সংগঠনটি।
অপরদিকে ভোট শেষে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচন হওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, কেউ কেউ নির্বাচন ‘বানচাল করার ষড়যন্ত্র’ করছে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চান, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিবিরের তরফ থেকে একটি স্কুলের কেন্দ্র থেকে ইসলামী আন্দোলনের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া এবং একুশে হল ও রোকেয়া হলে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ আনা হয়।
নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকার মধ্যে প্রবেশ মুখের বাইরে কয়েকটি স্থানে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষজনদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তারা বিএনপি ও যুবদল এবং জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।
ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ছোটখাটো অসঙ্গতি ও ব্যবস্থাপনাগত ভুলত্রুটি থাকলেও ভোট ‘গ্রহণযোগ্য না’, এমনটা মনে হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ভোটে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। সংবাদমাধ্যমের সদস্যরা সবসময় ছিলেন। তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে গেছেন, সবকিছু দেখেছেন। অনিয়মের অভিযোগ কোথাও উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এবার ৩৯ হাজার ৮৭৪ ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট দেন। তারা ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য পাশাপাশি হল ছাত্র সংসদের ১৩টি পদে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। প্রার্থী সংখ্যাও ছিল অনেক; কেন্দ্রীয় সংসদে ৪৭১ জন এবং হল সংসদে ১ হাজার ৩৫ জন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবগুলো বাঁকে ছাত্র সমাজের অগ্রণী ভূমিকার কেন্দ্রে থাকা ডাকসুর সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে।
সেবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নূরুল হক নুর ভিপি নির্বাচিত হন। জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
এর বাইরে সমাজ সেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি সব পদেই জয়ী হয় ছাত্রলীগ। ওই পদে জয়ী হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আখতার হোসেন।
তার আগে ডাকসুতে ভোট হয়েছিল ২৯ বছর আগে ১৯৯০ সালে। এরশাদ সরকারের আমলে ওই নির্বাচনে ছাত্রদল জয়ী হয়েছিল; ভিপি হয়েছিলেন আমানউল্লাহ আমান, জিএস হয়েছিলেন খায়রুল কবির খোকন।
সেবার ছাত্রী হলগুলোতে ব্যাপক সমর্থন এগিয়ে দিয়েছিল ছাত্রদলের প্রার্থীদের। আর এবার তাদের উত্তরসূরীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
এবারের নির্বাচনে পাঁচটি ছাত্রী হলেও ভরাডুবি ঘটেছে ছাত্রদলের, যেখানে ভোটার সংখ্যা মোট ভোটের প্রায় অর্ধেক। ছাত্রদের ১৩টি হলের মধ্যে জগন্নাথ হল ছাড়া আর কোনোটিতেই আবির-হামিমরা সুবিধা করতে পারেননি।