
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের তিন প্রার্থীর প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে পোস্ট করেছেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার রাত ২টার দিকে ওসি মোহাম্মদ মোজাফ্ফর হোসেনের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করা হয়।
‘শুভ কামনা রইল ২১, ১৭, ০৮’ লেখা একটি ফটোকার্ড তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করা হয়। তাতে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘মেধাবীদের জন্য শুভ কামনা রইল’।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে ২১ নম্বর ব্যালটে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হয়েছেন আবিদুল ইসলাম আবিদ, ১৭ নম্বর ব্যালটে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী হয়েছেন তানভির বারী হামিম এবং একই প্যানেলে ৮ নম্বর ব্যালটে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভির আল হাদী মায়েদ।
ওসির এই পোস্টের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা এটা করতে পারেন কি-না?
অবশ্য মঙ্গলবার দুপুরে সেই আইডিতে গিয়ে আর পোস্টটি পাওয়া যায়নি।
এর আগে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ওসি মোজাফ্ফর হোসেন নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আইডিতে শকুনের চোখ পড়েছে। হ্যাক করার চেষ্টা চলছে।’
পরে দুপুর ১২টার দিকে ‘সদর থানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে অফিসিয়াল ফেসবুকের এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ‘আমার ব্যক্তিগত আইডি হ্যাক করে রাজনৈতিক পোস্ট দিয়ে আমাকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। আমার আইডিতে শকুনের চোখ পরেছে। আইনি ব্যবস্থা নিব ইনশাআল্লাহ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোজাফ্ফর সাংবাদিকদের বলেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল।
ওসির এই পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
খাইরুল সরকার নামের এক ব্যক্তি ওসির ফেসবুক পেইজ থেকে করা পোস্টটি শেয়ার করে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘… যাক নির্বাচন করার আগে কেন সংস্কার দরকার এটা জনগণ ভুলে গেলেও অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা ভুলবে না। সে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচন প্রচারণা চালানো আইনগতভাবে বৈধ কি-না দেখতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান খোকন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ডাকসুতেই এই অবস্থা! জাতীয় নির্বাচনে কী হবে?’
প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ লিখেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পক্ষে প্রচারণা করছেন। পুলিশের ওসি পদে থেকে কীভাবে একটি দলের পক্ষে ক্যাম্পেইন করতে পারেন?’
সাংবাদিক মোজ্জামেল হক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট দিয়ে লেখেন, ‘আইন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা প্রকাশ্য সমর্থন প্রকাশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’
একজন ওসির কাছ থেকে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা প্রত্যাশিত; তবে হ্যাকিংয়ের অজুহাত দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না বলে মনে করেন মোজ্জামেল হক। যদি সত্যিই ওসির আইডি হ্যাক হয়ে থাকে, তবে সেটিও প্রমাণ করার দায়িত্বও তার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুখলেসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ওসির পোস্টে প্রতিবাদ জানিয়ে মন্তব্য করেছেন— ‘আপনি জনগণের সেবক, নির্দিষ্ট কোনো দলের চাকর নন, সেটা মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে কাজ করবেন। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করুন। রাজনীতি করতে চাইলে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসুন। আর না হলে জনগণের টাকায় আহার জোটে—জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবুন। আপনাদের রাজনীতি করতে হবে না।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন নিজের ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হয়েছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। হ্যাক হওয়া ওই আইডি থেকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। যাতে লেখা হয়, শুভ কামনা রইল ২১, ১৭, ০৮ উল্লেখ করা হয়েছে।
ওসি জিডিতে উল্লেখ করেন, আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি কে বা কারা উদ্দেশ্যে প্রনোদিতভাবে হ্যাক করে একটি রাজনৈতিক পোস্ট করেছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া স্ক্রিন শর্টে দেখা যায় যে, বেগুনি রংয়ের ব্যাক গ্রাউন্ডে শুভ কামনা ২১, ১৭, ০৮, লেখা পোস্ট প্রচার হচ্ছে। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিক পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (প্রশাসন ও অর্থ) অবগত করি। কে বা কারা এই পোস্ট করেছে আমার জানা নেই। পরবর্তীতে আমি আমার আইডিতে ঢুকে সেটি দেখতে পায়নি। আমি আমার সরকারি আইডি ‘Sadar Thana Brahmanbaria’ তে হ্যাক হওয়ার বিষয়টি অবগত করে পোস্টটি দিয়েছি। এই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, তিনি মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তিনি জিডি করেন। তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে আইডি হ্যাক করে রাজনৈতিক পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের পোস্টে মানুষকে বিভ্রান্ত না হয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।