
নেপালে তরুণদের আন্দোলনে সরকার পতনের ঘটনায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশটিতে অবস্থানরত হাজারো পর্যটক আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে আটকে আছেন বাংলাদেশি পর্যটকেরাও। মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিসহ তার মন্ত্রিসভার সবাই পদত্যাগ করেছেন। এরপর পুরো দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কয়েকশ’ পর্যটক গতকাল বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চড়ে ফেরার কথা থাকলেও চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক যাত্রীই দুপুরে ফেরার কথা থাকলেও বিমানবন্দরে এসে আটকা পড়েন। এতে চরম ভোগান্তির শিকারও হতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বিমানবন্দরে এসে আটকা পড়ায় চরম অনিশ্চয়তা ও ভীতির কথা জানিয়েছেন। বিমানবন্দরে আটকা পড়া বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিবেদক মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, দুপুরে আমার ফ্লাইট হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী এই থমথমে পরিস্থিতির মধ্যেও দেশে ফিরতে হোটেল থেকে রওনা হই। পথে পথে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেছে বিক্ষোভকারীরা। এখন এসে দেখি সব ফ্লাইটই বাতিল হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে খুবই ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছি। জানি না কখন কি হয়ে যায়।
এদিকে নেপালে চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে নামতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। পরে আবার ঢাকায় ফিরেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমানের ‘বিজি-৩৭১’ ফ্লাইট ১১৪ যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু কাঠমান্ডুর কাছাকাছি গেলে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্স দেয়নি ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে নেপালের আকাশে চক্কর দিয়ে ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হয়েছে বিমান। আবার কাঠমান্ডু-ঢাকা ‘বিজি-৩৭২’ ফ্লাইটের ৯৪ যাত্রী ঢাকা ফিরতে পারেননি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবির বলেন, নেপালে আটকে পড়া ৯৪ যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। একইভাবে ঢাকা থেকে যারা কাঠমান্ডু যেতে চেয়েছিলেন তাদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জরুরি বার্তা দূতাবাসের: নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এ জরুরি বার্তা দেয় নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাস। বার্তায় বলা হয়, নেপালে বর্তমানে বসবাসকারী বা আটকে পড়া সব বাংলাদেশি নাগরিককে বাইরে না যাওয়ার এবং নিজ নিজ স্থান বা হোটেলে অবস্থান করার জন্য কঠোরভাবে পরামর্শ দেয়া হলো। একইসঙ্গে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ভ্রমণ ইচ্ছুক সকল বাংলাদেশি নাগরিককে আপাতত নেপাল ভ্রমণ না করার নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নিচের নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মি. সাদেক +৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯: মিসেস সারদা:+৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১
উল্লেখ্য, গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (৮ই সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই তরুণ বা জেন-জি প্রজন্মের। এই আন্দোলনের নাম দেয়া হয় ‘জেন-জি রেভল্যুশন’।