Image description

পিরোজপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ও সাবেক জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। কেননা, স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত যতগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়েছে তার প্রত্যেকটির ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিজয়ী দলগুলো মোট ভোটের ৩০ থেকে ৩৫ পার্সেন্ট ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে। সরকার গঠনের পর তারা এ দেশের মালিক বনে যান। তারা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের বা দলের প্রয়োজন মাফিক যখন তখন সংবিধান পরিবর্তন করেন, তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দেশ পরিচালনা করেন, অথচ দেশের ৬৫ পার্সেন্ট মানুষ তাদেরকে ভোটই দেয়নি। এজন্য জামায়াত চায় পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জনগণের প্রত্যেকটি ভোটের হিসাব হবে। আপনি দেশের যে প্রান্ত থেকেই যে দলকে ভোট প্রদান করবেন, সেই দলের পক্ষেই আপনার ভোটের হিসাব করা হবে। এতে লাভ হবে, ৩০ বা ৩৫ পার্সেন্ট ভোট পেয়ে কেউ সরকার গঠন করে দেশের মালিক বনে যেতে পারবে না, মানুষের উপর জুলুম করতে পারবে না, স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাতে পারবে না। এ কারণেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। আমরা আমাদের দেশকে সপ্নের মতো সাজাতে চাই, সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই, তারপরেই আমরা থামতে চাই। 

 

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নের খেজুরতলা বাজারে জামায়াতে ইসলামীর অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী এসব মন্তব্য করেন। 

মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, আল্লামা সাঈদীকে ভোট দিয়ে যে চেয়ারটায় আপনারা বসিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন ওই চেয়ারটি একটি বিশাল আমানতের চেয়ার। ওই চেয়ারের প্রত্যেকটি কাজের হিসাব কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এই ভয় এবং অনুভূতি ছিল বলে তিনি একটি টাকারও দুর্নীতি করেননি। এটা আমি শুধু সন্তান হিসেবেই বলছি না, আমার এ কথার সাক্ষী আপনারাই।

 

তিনি আরো বলেন, আমাকেও আপনারা ভোট দিয়ে এই উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ কেউ বলতে পারেনি এবং পারবেও না যে, আমি একটি টাকারও দুর্নীতি করেছি। 

 

মাসুদ সাঈদী বলেন, ৫৪ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না বলে আমাদের মাথার ওপরে উঠে কিছু লোক কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে। আমাদেরকে ব্যবহার করে তারা পকেট ভারি করছে, সম্পদের মালিক হচ্ছে, জায়গা জমির মালিক হচ্ছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্য যে, ভোটের আগে তারা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার জন্য আমরা তাদেরকে ভোট দিচ্ছি আর আমরা বারবার প্রতারিত হচ্ছি। এই দেশটা কিন্তু আপনার আমার। আমরা তাদেরকে বারবার ক্ষমতায় পাঠিয়েছি আর তারা আমাদের স্বপ্নগুলো বারবার নষ্ট করেছে, ধ্বংস করেছে। আমরা এক এক জনকে নির্বাচিত করেছি, প্রত্যেকবার আমরা ঠকে গিয়েছি। আমাদের মনের মতো দেশকে কেউ গড়ে দেয়নি। আপনার আমার সন্তান যারা স্কুল কলেজে পড়ে তাদের ভবিষ্যতটা চিন্তা করেন। তাদের চাকরির ব্যবস্থাটা কে করবে, ভালো একটা ব্যবসার ব্যবস্থাটা কে করে দিবে। লুটপাট করে খেয়ে গেছে এক চাটার দল, এখন আবার কেউ কেউ সরকারে আসার আগেই খাচ্ছেন, তারা ক্ষমতায় আসলে কি করবে? 

প্রধান অতিথি আরও বলেন, পিরোজপুরসহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখুন ইসলামপন্থি দল ছাড়া প্রায় প্রত্যেকটি দলই খুন-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। আমরা মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পর দেশ সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে যাবে, আমার মতো অনেকেই ৭১ এর যুদ্ধ দেখেনি। আমরা ২৪শের যুদ্ধ দেখেছি, আমাদের সন্তানদের রক্ত দেওয়া দেখেছি, জীবন দেওয়া দেখেছি। আমরা মনে করেছিলাম এই জীবন দেওয়ার পরে হয়ত এই চাটার দল আর দুর্নীতিবাজের দল নিজের সংশোধন করবে। কিন্তু তা আর হলো না! আমাদের প্রশ্ন হলো, আমাদের সন্তানরা কি শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জীবন দিয়েছে। আমরা বিএনপি-জামায়াত যে আন্দোলন করেছিলাম শুধু একটি নির্বাচনের জন্য, নিশ্চয়ই না। নির্বাচন একটি অংশ ছিল মাত্র, শুধু নির্বাচনের জন্য আমরা আন্দোলন করি নাই। আমরা বাংলাদেশটাকে বদলে দিতে চেয়েছি, একটি পরিবর্তন চেয়েছি। 

তিনি বলেন, কেনো চাঁদাবাজদেরকে আপনারা ভোট দিবেন, দুর্নীতিবাজদের ভোট দিবেন, টেন্ডারবাজদের ভোট দিবেন। যদি আপনারা তা করেন তাহলে বাংলাদেশ সঠিক পথে হাঁটবে, আর সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে আবার সেই পূর্বের বাংলাদেশেই ফিরে যেতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের উপজেলা আমীর মাওলানা আলী হোসেন, ওলামা বিভাগের উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু হানিফ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপজেলা সভাপতি মো: মামুন হোসাইন, জামায়াতের পত্তাশী ইউনিয়ন আমীর হাফেজ মাওলানা. ফয়সাল হোসেন, সেক্রেটারি এনামুল হক প্রমুখ। পরে দোয়া ও মোনাজাত করেন ৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মাওলানা নুরুল ইসলাম। 

এর আগে সোমবার সকাল থেকেই মাসুদ সাঈদী ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের বিজিএস দাখিল মাদ্রাসা, এফ. করিম আলীম মাদ্রাসা, সরকারি ইন্দুরকানী কলেজ, ইন্দুরকানী মেহেউদ্দিন মডেল মাধ্যমিক পাইলট বিদ্যালয়, সেতারা স্মৃতি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পত্তাশী জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে বিকাল ৪টায় উপজেলার বাগলেরহাট পথসভা শেষে পত্তাশী বাজারে এসে গণসংযোগ করেন। এরপর রাত ৮ টার দিকে রামচন্দ্রপুর এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।