Image description
 

সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন মো. সারওয়ার আলম। তাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ডিসি সারোয়ারকে নিয়ে তিনি পোস্ট করেন। সেই পোস্টে একাধিক ঘটনা তুলে ধরে ডিসি সারোয়ারকে নিয়ে একটি দুঃখ ও কষ্টের কথাও উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা।

 

পোস্টে আসিফ নজরুল বলেন—চলে যাওয়ার দিন ঘটনাটা বলল সারওয়ার। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অভিযান করে দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল সে একসময় । কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ চক্র। তার প্রমোশন আটকে দেয়া হয়, গুরুত্বহীন পদে বদলি করা হয় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে। মনমরা হয়ে সারওয়ার বসে থাকত তার কক্ষে। কোভিডের শেষদিক তখন। মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া আটকে আছে কর্মীদের। ভ্যাকসিনের জন্য মরিয়া হয়ে তারা ঘেরাও করে মন্ত্রণালয়। তাদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দেয়া হয়। একপর্যায়ে সচিবও বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা নাছোড় বান্দা, কারো কথা বিশ্বাস করেন না তারা। শোরগোল ছাপিয়ে একটা কথা শোনা গেল অবশ্য। একজন বললে তার কথা বিশ্বাস করবেন প্রবাসগামী কর্মীরা। তিনি সারওয়ার!

 

অবশেষে সারওয়ারকে নিচে আসতে বলা হলো। তাকে দেখে কর্মীরা শান্ত হলো। সারওয়ার জানালো কবে তাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তার আশ্বাসে ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। কর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে গেল। মন্ত্রী-সচিব হাফ ছেড়ে বাঁচল। সারওয়ার নিজ রুমে গিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। এই ঘটনা বলার সময় চোখ মুছলো সে। আমরাও তাই করলাম।

 

আসিফ নজরুল লেখেন—সারওয়ারকে আমি প্রথম দেখি আলোচনার টেবিলে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মাত্র নিয়েছি তখন। কনফারেন্স রুমে বিশাল লম্বা টেবিলে বসে আমি উত্তেজিতভাবে কী কী করতে হবে বলি। কারো মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। শুধু মাঝারি আকৃতির, আমার মতো সাদামাটা একজন সারাক্ষণ উৎসাহ নিয়ে মতামত জানাতে থাকে। সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই হবে আমার পিএস। অল্পদিনের মধ্যে বুঝতে পারি, এটাই হচ্ছে একসময়ের বিখ্যাত সারওয়ার।

তাকে তবু আমি বেশি স্নেহ করতে পারিনি, বকাবকিই বেশী করেছি। কাজ আগায় না এই হতাশা থাকে সারাক্ষণ। তার ওপর যাকেই কিছু জিজ্ঞেস করি, দেখি সারওয়ারই আগ বাড়িয়ে বলে দেয় সব। আর ছিল আমার জন্য তার বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন। এয়ারপোর্ট যাবো, ফিরে আসবো, কতবার তাকে বলি আপনাকে যেতে হবে না, যাবেই সে। বকাবকি বেশী করা হলে নিজেই মন খারাপ করতাম, দু-একবার বোধহয় সরি-ও বলেছিলাম তাকে।

 

সরকারি অফিসাররা সাধারণত কাজ করেন যান্ত্রিকভাবে। বাড়তি কাজ বা সংস্কার নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নাই তাদের। তবু প্রধানত সারওয়ারের (এবং আরো দু-একজনের) সার্বক্ষণিক সহায়তা আর সমর্থন নিয়েই কয়েকটা বড় কাজ আমরা করতে পেরেছি। যেমন: প্রবাসী কর্মীদের ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করেছি, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভাইদের জন্য মাল্টিপল ভিসা করা গেছে, জাপান আর কোরিয়ার বাজার আরেকটু উন্মুক্ত হয়েছে, প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনসহ প্রবাসী কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

 

লক্ষ্য যা ছিল তার অর্ধেকের মতো মাত্র করেছি। এরমধ্যে একদিন এলো সারওয়ারের বদলির খবর। সিলেটে সাদাপাথর বিতর্কের পর তড়িঘড়ি করে তাকে সেখানে ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সিলেটি বন্ধু আর পরিচিত মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে আটকাই আর কোন বিবেচনায়!

 

ডিসি সারওয়ার নিয়ে একটি কষ্টের কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন—তাকে নিয়ে একটা দু:খ থাকলো অবশ্য। আমার সম্পর্কে নানান আজগুবি খবর আসে ফেসবুক আর ইউটিউবে। এগুলো অবশ্য অস্বাভাবিক না। আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিষ্টরা আছে, উগ্রবাদীরা আছে, আছে ভিউ ব্যবসায়ীরা, আছে বটবাহিনী। কিন্তু আমাদের সরোয়ার...! রাজনীতির ধারেকাছে না থাকা আপাদমস্তক পেশাদার মানুষ সে। তবু তার বিরুদ্ধেও কালিমা লাগানোর অপচেষ্টা হয়েছে। আমি এর প্রতিকার করতে পারিনি পুরোপুরি। এই কষ্ট থাকবে আমার।

সারওয়ারকে স্মরণ করে ড. আসিফ নজরুল লেখেন—সারওয়ার আপনাকে মিস করি। দোয়া করি, জুনিয়র অফিসাররাও শিখুক আপনাকে দেখে। শুধু সিলেট না, সততা, সাহস আর কর্মনিষ্ঠার জন্য সারা দেশের মানুষ ভালোবাসে আপনাকে। আমাদের আশাবাদী থাকার এটাও একটা কারণ।